অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
টানা চতুর্থ মাসের ন্যায় বেড়েছে বাংলাদেশের পণ্যদ্রব্য রফতানি। গেল ডিসেম্বর মাসে যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হারে। মূলত তৈরি পোশাক বা আরএমজির ওপর ভর করেই হয়েছে এ প্রবৃদ্ধি।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দীর্ঘ সময় ধরে চলা শ্রমিক অসন্তোষের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া সত্ত্বেও – যা পোশাক খাতের অদম্যতাকে তুলে ধরে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্যানুসারে, ডিসেম্বরে দেশের রফতানি আয় পৌঁছায় ৪৬৩ কোটি ডলারে, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট পণ্য রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের প্রধান রফতানি আয়কারী– তৈরি পোশাক খাতের অবদান হলো ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ডলার। এটি মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৫৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রায় ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পোশাক খাতের মধ্যে ১ হাজার ৮৩ কোটি ডলারের রফতানি আয়ে অবদান রাখে নিট পোশাক। অন্যদিকে ৯০৫ কোটি ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে।
কেবল ডিসেম্বরে মাসেই পোশাক খাত ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১৮৯ কোটি ডলার, আর ওভেন পোশাকপণ্য থেকে ১৮৭ কোটি ডলার।
রফতানি গন্তব্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফলে বিক্রি বাড়া, এবং প্রধান প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলো শ্রম অস্থিরতা থেকে স্থিতিশীল হওয়ার ফলে অন্য দেশে চলে যাওয়া কিছু অর্ডার আবার ফিরে আসা— মূলত এই দুটি কারণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক রফতানিকারকরা।
টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, রফতানিতে প্রবৃদ্ধির অর্থ হলো বাংলাদেশে আসা কার্যাদেশ বেড়েছে। এ সময় নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ছয়টি উৎপাদন ইউনিটের সবকটিই পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়েছে।
রাকিব পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন– বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনেরও সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি উল্লেখ করেন যে, পশ্চিমা দেশগুলোয় বড়দিন, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ইংরেজি নববর্ষ, থ্যাংকস গিভিং ও বক্সিং ডে'র কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আমাদের টেক্সটাইল মিল সক্ষমতার ৯২ শতাংশ চালু ছিল। 'তবে আমরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পূর্ণ সক্ষমতায় মিল চালানোর মতো অর্ডার বুক করতে পেরেছি, ডিসেম্বরেও কারখানা ১০০ শতাংশ সক্ষমতায় চলেছে।'
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালিয়ে যেতে তারা বড় ক্রেতাদের থেকে পূর্বাভাস পেয়েছেন। তবে পশ্চিমা বিশ্বের বাজারে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে, বায়াররা আরও কম দামে পোশাক কিনতে চাইছে।
রফতানির অন্যান্য প্রধান খাতের মধ্যে, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় ১০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি করেছে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বরে হয়েছিল ৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
২৪ দশমিক ১৯ শতাংশের মতো বড় প্রবৃদ্ধি নিয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিও ভালো করেছে। এ খাতের মোট রফতানি ১১ কোটি ডলারের বেশি হয়েছে, যা আগের বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৮ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
ডিসেম্বরে টেক্সটাইল বা বস্ত্রখাতের রফতানি ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের হয়েছে, আগের বছরে একই সময়ে যা ছিল ৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রফতানি আয় ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের কিছু বেশি হয়েছে। বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে যা ছিল ৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের বেশি। ●
অকা/তৈপোশি/ই/ সকাল, ৫ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 11 months আগে

