অর্থকাগজ প্রতিবেদন  ●
বাংলাদেশ দেশ থেকে যে পরিমাণ পোশাক রফতানি হয় তার প্রায় ৫০ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। সম্প্রতি বিশ্ববাজার থেকে পোশাক আমদানি কমিয়েছে ইইউ। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের বাজারেও। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল চার মাসে ইইউ বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমিয়েছে ৬৫ কোটি ৮৩ লাখ ইউরো বা ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

এছাড়া ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের একই সময়ে অন্তত ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ আমদানি কম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবারো ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট। ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোর সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে ইইউর দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৬৬২ কোটি ইউরোর পোশাক আমদানি করে। ২০২৩ সালে একই সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ইউরো। অর্থাৎ ওই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৯৩ কোটি ইউরোর আমদানি কমায় ইইউ, যা প্রবৃদ্ধির হারে ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ঋণাত্মক হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপীয় জোটভুক্ত দেশগুলোতে গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তৈরি পোশাকের বাজার সংকুচিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইইউর জোটভুক্ত দেশগুলোতে তৈরি পোশাক আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা গেছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এ চার মাসে আমদানি করে ২ হাজার ৮১৮ কোটি ৭১ লাখ ইউরোর পোশাক, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪১ কোটি ৬২ লাখ ইউরো। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এ চার মাসে বাংলাদেশ থেকেও পোশাক আমদানি কমেছে। এ সময় দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে ইইউর দেশগুলো পোশাক আমদানি করেছে ৬৬৭ কোটি ২১ লাখ ইউরোর, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৬০১ কোটি ৩৮ লাখ ইউরো। ফলে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় জোট নিটওয়্যার আমদানি করে প্রায় ৩৮৮ কোটি ইউরোর, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৮ কোটি ইউরো। এছাড়া ওভেন পোশাকে ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসে প্রায় ২৮০ কোটি ইউরো এবং ২০২৪ সালের একই সময়ে ২৬৪ কোটি ইউরো আমদানি করে।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বর্তমান বাজার মন্দা। এর মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কাস্টমসের নানা রকম অসহযোগিতা এবং ডিপ সি পোর্ট না থাকার কারণে পণ্য পাঠাতে অনাকাক্সিক্ষতভাবে অনেক সময় লেগে যায়। আবার ডলার সংকট, ব্যাংকের অসহযোগিতা তো রয়েছেই। যে কারণে ক্রেতারা আমাদের এখানে অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। ফলে শুধু ইউরোপ নয়, সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রফতানিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিচ্ছে।’

এদিকে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোর তৈরি পোশাক আমদানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চীন থেকে কমেছে ১২ কোটি ৭৪ লাখ ইউরো বা ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, ভারত থেকে ১৮ কোটি ৩৮ লাখ ইউরো বা ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ভিয়েতনাম থেকে ৭ কোটি ৮৪ লাখ ইউরো বা ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং তুরস্ক থেকে ৪০ কোটি ৭০ লাখ ইউরো বা ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যায়, সেটি দেখতে হবে। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাপ্লাই চেইন ও মূল্যস্ফীতিসহ আরো অনেক বিষয়। সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও কিছু চাপ তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ সালে অর্থনীতি সার্বিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে, যা সামলে ওঠার আশা থাকলেও সেটি প্রত্যাশাতীতভাবে হচ্ছে না।

অকা/পোশি/ফর/সকাল/২৩ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

Leave A Reply

Exit mobile version