অর্থকাগজ প্রতিবেদন
বীমা খাতের কার্যক্রম সাধারণত এজেন্টভিত্তিক হলেও, বর্তমানে এ খাতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা একটি জটিলতা নিয়েছে। বাংলাদেশে বীমা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও নিয়ম বিদ্যমান, যা চূড়ান্তভাবে এজেন্টদের মাধ্যমে বীমা পলিসি বিক্রির জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে। দেশের বীমা আইন অনুযায়ী, বীমা কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত কমিশনের ভিত্তিতে এজেন্টদের মাধ্যমে পলিসি বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বাস্তবতার দিকে তাকালে দেখা যায়, বেশ কিছু বীমা কোম্পানি এই নিয়মগুলোর লঙ্ঘন করে কমিশন হিসাব ছাড়া পলিসি বিক্রি করছে।

২০২৪ সালে দেশের ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানি মোট ৯ লাখ ৭ হাজার ১৮৬টি পলিসি বিক্রি করেছে। এর মধ্যে মাত্র চার লাখ ৮১ হাজার ১৮৬টি পলিসির বিপরীতে এজেন্ট কোড ব্যবহার করা হয়েছে। চিন্তার বিষয় হলো, বাকি চার লাখ ২৫ হাজার ৯৪২টি পলিসি এজেন্ট ছাড়া বিক্রি করা হয়েছে, যা মোট পলিসির ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এইসব পলিসির কমিশনের টাকা কাকে দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সেই সাথে, বেসরকারি কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এক বছরে ১ কোটি ৭৪ লাখ পলিসি বিক্রি করেছে, কিন্তু এর মধ্যে কোনো এজেন্টের তথ্য নেই।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীউনিক) এই বিষয়গুলোতে নজর দিয়েছে এবং কোম্পানিগুলোকে আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। এজেন্ট কোড ছাড়া পলিসি ইস্যু এবং কমিশনের অর্থ ব্যবহারের পেছনে যে গুরুতর তথ্য গোপন রাখা হয়েছে, তা নিয়ে বীউনিক তদন্ত শুরু করেছে। বীউনিকের মুখপাত্র শামসুন্নাহার সুমি জানান, আইনের লঙ্ঘনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

কোম্পানি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে তারা কমিশন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। অনেক কোম্পানি তারাপরবর্তী তথ্য গোপন রাখতে নিয়ম ভঙ্গ করছে, যার ফলে কমিশনের ব্যয় বাড়তে পারে। এই চ্যালেঞ্জের মুখে আসলে কোম্পানিগুলো বিক্রির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অথবা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আবর্জনার মতো নিয়ম ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশ বীমা অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ বলেন, "বীমা খাতে স্বচ্ছতা আনা অতি জরুরি, এবং আমরা চাই সব কোম্পানি চলমান নিয়ম মেনে চলুক। কিছু কোম্পানির অনিয়মের কারণে খাতটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এজেন্ট লাইসেন্স নবায়ন না করা, এজেন্ট কোড ছাড়া পলিসি ইস্যু, এবং কমিশনের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে ব্যভিচার সৃষ্টি হয়েছে।"

সুতরাং, বীমা খাতের এই বিশৃঙ্খলার পেছনে যে কারণে তা চিহ্নিত করতে ও সংশোধনের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আলোর মুখে আনা অত্যন্ত জরুরি। যদি এ বিষয়গুলো ভবিষ্যতে ঠিক না হয়, তাহলে এর পরিণতি কেবল কোম্পানির জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্যও হতে পারে মারাত্মক। বীউনিকের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কোম্পানিগুলোর আইনের প্রতি সম্মান জানানোর মাধ্যমে এই খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সরকারী ও বেসরকারি উভয় পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং যথাযথ পরিদর্শনের মাধ্যমে বীমা খাতে এই নৈরাজ্য প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

এটি সম্ভব করতে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ, বলিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং বীমা খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধির প্রয়োজন। সঠিক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এই খাতটি তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করার সুযোগ পাবে।
অকা/জীবী/বিপ্র/ই/ সকাল/২৫ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 7 months আগে

Leave A Reply

Exit mobile version