অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের বীমা খাত এখনো গ্রাহক আস্থা ও স্বচ্ছতার দিক থেকে ব্যাংকিং খাতের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে—এমন মূল্যায়ন দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হলেও বীমা খাত এখনো সেই স্তরে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে খাতটির স্থিতিশীল বিকাশের জন্য গ্রাহকের আস্থা পুনর্গঠন এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আর এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, দ্রুত দাবি নিষ্পত্তি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর তদারকি।
গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে ‘বীমা খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব মতামত ব্যক্ত করেন বক্তারা। ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) আয়োজিত এই কর্মশালায় সংগঠনের ৩৫ জন সদস্য অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইআরএফ সভাপতি গাজী আনোয়ারুল হক।
গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাকিবুল করিম বলেন, “বাংলাদেশে প্রযুক্তির অগ্রগতি এখন বিস্ময়কর পর্যায়ে। আজ খাবার অর্ডার করলে অ্যাপের মাধ্যমেই জানা যায় রান্না কখন শেষ হচ্ছে, ডেলিভারি কখন বেরিয়েছে বা কখন দরজায় পৌঁছাবে। অথচ বীমা খাতে এখনো এমন কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নেই, যেখানে গ্রাহক নিজের পলিসির অগ্রগতি, প্রিমিয়াম জমা বা মেয়াদ সম্পর্কিত তথ্য রিয়েল টাইমে জানতে পারেন।”
তিনি মনে করেন, গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে কেবল প্রচলিত পদ্ধতিতে নয়, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা ও নতুন পণ্যের উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দাবি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে দ্রুত, সহজ ও স্বচ্ছ করার বিকল্প নেই।
রাকিবুল করিম আরও বলেন, “কিছু কোম্পানি দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় পুরো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএকে আরও কঠোর নজরদারিতে যেতে হবে।”
তিনি জানান, গার্ডিয়ান লাইফ বর্তমানে শতভাগ ক্যাশলেস দাবি নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই গ্রাহকের একাউন্টে অর্থ পৌঁছে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে বাজারে যেতে চাই না। আমাদের প্রবৃদ্ধি, গ্রাহকভিত্তি ও ব্র্যান্ড মূল্য বিবেচনায় গার্ডিয়ান লাইফের শেয়ার মূল্য অবশ্যই ১০ টাকার বেশি হওয়া উচিত।”
কর্মশালায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দেশের ৩৬টি জীবনবীমা কোম্পানির মাধ্যমে মোট ৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয় হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪টি কোম্পানি মোট প্রিমিয়ামের প্রায় ৮৮ শতাংশ আয় করেছে। শীর্ষ ১০টি কোম্পানি প্রত্যেকেই ১০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব অর্জন করেছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে মোট ৮২টি বীমা কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে—এর মধ্যে ৩৬টি জীবনবীমা ও ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি।
কর্মশালার আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের বীমা খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধার ও কার্যকর সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর। দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব রোধ, সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন প্রোডাক্ট উদ্ভাবন এবং আইডিআরএ’র কঠোর তদারকি—এই চারটি উপাদান নিশ্চিত করা গেলে বীমা খাত দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য ও শক্তিশালী স্তম্ভে পরিণত হতে পারে। ●
অকা/বী/ই/সকাল/১৬ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 16 hours আগে