তারেক আবেদীন ●
বিজয়ের মাসের শেষ সপ্তাহে মহানগরে বাণিজ্যিকভাবে বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ১০ মিনিট পর পর দৈনিক ১৬ ঘন্টা রেল চলাচল করবে উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও রুটে। তবে যাত্রী চাহিদা বাড়লে চলাচলের সময়কাল বাড়ানো হবে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক অর্থকাগজকে জানিয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে উদ্বোধনের আগে যাত্রীবিহীনভাবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে আবারও পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। আশা করছি বিজয় মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হবে।
১০ সেট ট্রেন নিয়ে প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এ রেল। যেখানে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে। সেই সঙ্গে রেলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে অনেক অপেক্ষার মেট্রোরেল। এ জন্য ১২টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মানুষের ভোগান্তি দূর করতে, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য বর্তমান সরকার ২০১২ সালে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করে। পরীক্ষামূলক এই চলাচলের জন্য মোট ১৯টি ধাপ শেষ করতে হয়েছে।
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে ট্রেন। তাই সময় আর গতির মেলবন্ধন ঠিক করার পরীক্ষাও চলছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় মেট্রোরেলের ইন্টিগ্রেশন টেস্ট। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের পথে চলছে ১০ সেট ট্রেন। প্রতি সেট ট্রেনে ছিল ছয় বগি। একেক বগিতে ৫৪ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। দাঁড়িয়ে ভ্রমণের জন্য আছে পর্যাপ্ত জায়গা।
একেকটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী চড়তে পারবেন। সেই হিসেবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ঘণ্টায় যাতায়াত করবেন কমপক্ষে ৩০ হাজার যাত্রী। এই পথের ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। স্টেশনগুলোতে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রতি স্টেশনের দ্বিতীয় তলাটি যাত্রীরা ফুটওভারব্রিজ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।
থাকবে নানা পণ্যের দোকান। তবে, তৃতীয় তলার প্ল্যাটফরমে উঠতে লাগবে টিকিট। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা সব স্টেশনেই টিকিট কাটতে পারবেন। থাকছে মেট্রোপাসের সুবিধাও। শুরুতে ১০ মিনিট পরপর মিলবে ট্রেন। পরে যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন এসে দাঁড়াবে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য।
বিপত্তি বেধেছে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশনে। এই তিন স্টেশনের সিঁড়ি নির্মাণে হিমশিম অবস্থা। কারণ চলাচলের জায়গার অভাব। স্থানীয়রা বলছেন, চিঠি আসলেও কবে নাগাদ অধিগ্রহণ করা হবে, কতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেই তথ্য এখনো জানানো হয়নি।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। পুরো পথ চালু হবে আগামী বছর।
তখন ২৪ সেট ট্রেন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল করবে। পুরো পথটি চালু হলে ঢাকার যোগাযোগে যেমন গতি আসবে তেমনি জিডিপিতে যুক্ত হবে ১ শতাংশ। মেট্রোরেলের কমপক্ষে ভাড়া ২০ টাকা রাখা হয়েছে।
মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ আসবে সরাসরি জাতীয় গ্রিড থেকে। এ জন্য উত্তরা ও মতিঝিলে দুটি ১৩২ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৮০ মেগাওয়াট আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জোগান থাকবে।
পরীক্ষামূলক চলাচলেই এখন মাসে কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে। বাণিজ্যিক চলাচলে এই খরচ আরো বাড়বে। তারপরেও ঢাকার নগর পরিবহন ব্যবস্থাকে পালটে দেবে মেট্রোরেল।
উল্লেখ্য, ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল। যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে’র একটি অংশ। আর ১৮৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেল ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯০৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথম বারের জন্য খোলা হয়েছিল।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান হলো প্রথম দেশ যারা ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেল ব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় মেট্রোসিস্টেম নির্মাণ শুরু করে। এর পরে ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রোরেল ব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ●
অকা/নদবিপ্র/রাত, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 years আগে
