অর্থকাগজ ডেস্ক ●
ট্রাম্পের সর্বশেষ উচ্চ হারে আমদানি কর আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যদিও ব্যবসায়ীরা কিছুটা খরচ নিজেরা বহন করার চেষ্টা করেছেন, তারা এখন হয়তো তার কিছু অংশ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। এর অর্থ হচ্ছে, আমেরিকানদের বেশি দাম দিতে হবে।
মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা শীর্ষ পণ্যের মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম। চীন, মেক্সিকো, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ছিল।
চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর এরই মধ্যে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে। ১২ আগস্টের মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি না হলে এই শুল্ক হার আরও বাড়তে পারে। মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যগুলো ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বারিত বাণিজ্যচুক্তির শর্ত পূরণ করলে শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারে।
অন্যদিকে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া থেকে আসা পণ্যের শুল্ক আগামী সপ্তাহে বর্তমান হারের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। যদিও সার্বিকভাবে দাম বাড়ার হার সীমিত, ভোক্তা মূল্য সূচকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে কম্পিউটারের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি ছিল।
শীর্ষ পাঁচটি বিদেশি কম্পিউটার রফতানিকারক দেশের মধ্যে না থাকলেও ভারত এখনো যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ও অন্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের বড় সরবরাহকারী। তাদের পণ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ইয়েল বাজেট ল্যাবের অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর থাকে, তাহলে স্বল্প মেয়াদে (২-৩ বছরের মধ্যে) কম্পিউটার ও অন্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম ১৮ দশশিক ২ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে (৩-১০ বছরের মধ্যে) ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে।
ইলেকট্রনিকস পণ্যের মতো পোশাকের একটি বড় অংশ বিদেশ থেকে কেনে যুক্তরাষ্ট্র। প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া।
এসব দেশের ওপর ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করছেন, তা পোশাকের দামে বড় প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে যেহেতু পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আমদানি পণ্যের একটি। ইয়েল বাজেট ল্যাবের অনুমান অনুযায়ী, পোশাকের দাম স্বল্প মেয়াদে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
পৃথিবীর সবখানেই সুইজারল্যান্ডের ঘড়ির কদর আছে। এই সুইস ঘড়িও এখন ৩৯ শতাংশ ‘পারস্পরিক’ শুল্কের মুখে পড়েছে। গত বছর দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ঘড়ি পাঠিয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের দাম, যার মধ্যে ঘড়িও আছে, স্বল্প মেয়াদে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া শীর্ষ জুতা রফতানিকারক দেশ। এই তিন দেশের জুতার ওপর আগামী সপ্তাহ থেকে ন্যূনতম ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে নিশ্চিতভাবে জুতার দাম বাড়বে।
ওয়াইন অ্যান্ড স্পিরিটস হোলসেলারস অব আমেরিকার তথ্যানুসারে, আমেরিকার অ্যালকোহল বাজারের মোট বিক্রির ৩৫ শতাংশ রাজস্ব আসে আমদানি করা ওয়াইন ও স্পিরিট থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াইন, হুইস্কি ও ভদকার বড় সরবরাহকারী, সেখান থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ছে।
ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের ফার্নিচারের শীর্ষ সরবরাহকারী, এরপরেই রয়েছে চীন।
খেলনার েেত্র চীন ও ভিয়েতনাম শীর্ষ দুই রফতানিকারক দেশ। চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের কারণে খেলনা ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যেই দাম বাড়ানোর সতর্কতা দিয়েছে। ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা শুল্কের পুরো খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেননি। পাশাপাশি উচ্চ আমদানি করের আশঙ্কায় অনেকেই কয়েক মাস ধরে পণ্য মজুত করে রেখেছেন। সে কারণে গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদেরা অনুমান করছেন, আমদানি করা ভোক্তাপণ্যের খরচের প্রভাব ভোক্তাদামে পুরোপুরি প্রতিফলিত হতে প্রায় আট মাস সময় লাগবে। ●
অকা/বিবা/ফর/বিকাল/৩ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

