অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আদায় নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম দুই মাস—জুলাই ও আগস্টে—লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, বরং ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ, তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় অর্থবছরের শুরুতেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জুলাই মাসে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। আগস্টে সেই ঘাটতি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। দুই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। এর ফলে নির্ধারিত লক্ষ্য থেকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভ্যাট খাতেই সবচেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই-আগস্টে ভ্যাট আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৪০৯ কোটির চেয়েও বেশি। এতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে অন্যান্য খাতে পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। কাস্টমস শুল্ক থেকে আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ২১ কোটি টাকা। একইভাবে আয়করে আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৩৭৯ কোটির তুলনায় অনেক কম। আয়করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং শুল্কে মাত্র ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।
শুধু আগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। ফলে ওই মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। তবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। খাতভিত্তিক তথ্য বলছে, আগস্টে কাস্টমস শুল্ক খাতে আদায় হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৬১ কোটির তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে ভ্যাট খাতে লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৬৬০ কোটির বিপরীতে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। আয়করে লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ১৬৭ কোটি হলেও আদায় হয়েছে ৮ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় থেকেই এনবিআর কর্মীদের আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে কলমবিরতি, পরে তা পূর্ণ শাটডাউনে রূপ নেয়। এতে কাস্টমস কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে, যার প্রভাব এখনও কাটেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা পরিস্থিতি ও এনবিআরের অস্থিরতা রাজস্ব আদায়কে আরও কঠিন করে তুলেছে। তার মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে সংগ্রহের লক্ষ্য ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ৬৫ হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে আসবে। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতেই উল্লেখযোগ্য ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই এ ধরনের ঘাটতি তৈরি হওয়া আগামী মাসগুলোতে রাজস্ব সংগ্রহের চাপ বাড়াবে। বাজেট বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে কেবল ভ্যাট বা কর্পোরেট ট্যাক্সের ওপর নির্ভর না করে রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রগুলোতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বিশেষ করে শুল্ক খাতে প্রশাসনিক সংস্কার এবং আয়কর আহরণে স্বচ্ছতা ও করদাতাদের আস্থা বাড়ানো জরুরি। অন্যথায়, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সংকোচন, সরকারি ঋণ বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতায় চাপ তৈরি হতে পারে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন সরকারের অন্যতম বড় অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ●
অকা/রা/ই/সকাল/২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 weeks আগে