অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশে গত বছর থেকে ব্যাপক আকারে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ডলারের ব্যয় বাহুল্যতা কমাতে সীমাবদ্ধ টেনেছে সরকার। আবার দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ অতিরিক্ত দামেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চলতি বছরের আগস্টে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে লেনদেন বাড়লেও বিদেশে বাংলাদেশিদের কার্ডের মাধ্যমে ডলার ব্যয় ১৮ শতাংশের বেশি কমেছে।
চলতি বছরের আগস্টে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশিদের কার্ডের মাধ্যমে ডলার ব্যয় হয়েছে ৪১৮ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৫১১ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে ডলারের ব্যবহার কমেছে ৯৩ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ । তবে এই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে এখন তীব্র ডলার সংকট চলছে। ফলে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা মতো ডলার পাচ্ছে না। এই অবস্থায় অনেকে জরুরি প্রয়োজন না হলে দেশের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন। আর এই কারণেই দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার ব্যয় কমেছে।
অন্যদিকে সঙ্গে করে নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকদের অনেকে বর্তমানে দেশের ভিতরে কার্ড ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার শাখায় গিয়ে লাইন ধরে লেনদেন করতে বাড়তি সময় লাগে। এ ছাড়া ব্যাংকিং সময়ের বাইরে যে কোনো লেনদেনের সুবিধার কারণে এখন কার্ড লেনদেনে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড সেবাকে জনপ্রিয় করে তুলতে নানা ছাড় ও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রথম বছরে ফ্রি সেবা, নির্দিষ্টসংখ্যক লেনদেনে প্রতিবছর বাড়তি চার্জ মওকুফ, রিওয়ার্ড পয়েন্ট সুবিধা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কেনাকাটায় বিশেষ ছাড়, হোটেলে থাকা ও খাওয়াসহ নানা অফার। এর ফলে দেশে এখন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেড়ে সাড়ে ২২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাসে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের মাস জুলাইয়ে ছিল ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেশের ভেতর ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ৯৬ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) দেশের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ১৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। আলোচ্য এই সময়ের মধ্যে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৩২৪ টাকার। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডে দেশের মধ্যে খরচের প্রবণতাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড হলো এক ধরনের এটিএম কার্ড যার মাধ্যমে ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রতিমাসে লোন দিয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ডটি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তি ব্যাংক থেকে লোনপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রতিমাসে যেকোন খাতে খরচ করতে পারেন এবং মাস শেষে খরচকৃত টাকা তাকে পরিশোধ করতে হয়।
দেশভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে ভারতে। এর পরিমাণ ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, অর্থের হিসাবে যা ৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনে অন্যান্য দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৯ দশমিক ৫১, যুক্তরাজ্যে ৭ দশমিক ৬৯, সিঙ্গাপুরে ৭ দশমিক ৬১, কানাডায় ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ দশমিক ৪৯, মালয়েশিয়ায় ৫ দশমিক ৪০, সৌদি আরবে ২ দশমিক ৮৯, নেদারল্যান্ডসে ২ দশমিক ৮১, আয়ারল্যান্ডে ২ দশমিক ৭৩, অস্ট্রেলিয়ায় ২ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে ১২ দশমিক ০২ শতাংশ।
দেশের মধ্যে ব্যবহার করা ক্রেডিট কার্ডের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি হয়েছে দেশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। মোট ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক লেনদেন হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয়।
এ ছাড়া ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ খুচরা দোকানের ক্ষেত্রে, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ ইউটিলিটি, ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ নগদ অর্থ উত্তোলন, ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ ওষুধ ও ফার্মেসিতে, ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ পোশাক কেনাকাটা, ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে ফান্ড ট্রান্সফারে, ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ট্রান্সপোর্টেশন, ২ দশমিক ১৮ শতাংশ ব্যবসা সেবা এবং ১ দশমিক ০৯ শতাংশ ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন হয়েছে অন্যান্য প্রয়োজনে।
লেনদেনে কার্ডের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিসা কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এ সময়ে। এর পরিমাণ ৭৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে মাস্টার কার্ড, এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ১৪ দশমিক শূন্য ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া বাকি প্রায় ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছে অন্যান্য কার্ডের মাধ্যমে।
অকা/ব্যাংখা/ সকাল, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 years আগে