অর্থকাগজ প্রতিবেদন
বর্তমানে শেয়ার বাজার মানেই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। পতন ঠেকাতে মূল্যসীমায় (সার্কিট ব্রেকার) আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। কিন্তু এতে বাজারে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। শেয়ার বাজার পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় খারাপ অবস্থায়। বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাজারে কিছু অস্বাভাবিক লেনদেন কমিশনের নজরে এসেছে। এরপর নিম্ন লেভেলে সার্কিট ব্রেকারের (একদিনে দাম কমার সীমা) সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কমিশন কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। তবে কেউ আইনের লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই বাজারে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী শেয়ার বাজার ছেড়েছে। এদের মধ্যে বড় অংশই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। আর বাজারের এই নেতিবাচক অবস্থার জন্য এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়। কখনো দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নেতিবাচক অবস্থা, কখনো বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ব্যাংকের সুদের বৃদ্ধি অন্যতম। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ যুদ্ধের মুখোমুখি হলেও এর কোনো দেশেরই শেয়ার বাজারে প্রভাব পড়েনি। ইরান ও ইসরাইল দুই দেশেরই শেয়ার বাজার স্বাভাবিক। অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো-এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো-ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন দুর্বলতাও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এই সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে শেয়ার বাজারের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। কমছে মূল্যসূচক। কমিশন মনে করে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করছে। লেনদেন মূল্যসীমায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে বাড়তে পারবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এর আগে কমার ক্ষেত্রেও এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বাজার।
অকা/পুঁবা/সৈই/সকাল/২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে