অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
টানা চার দিন বন্ধের পর ৫ অক্টোবর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দেশের দুই পুঁজি বাজারেই সব সূচকের উন্নতি ঘটে। তবে এ সময় বাজারে বিনিয়োগকারিদের অংশগ্রহণ ছিল তলণামূলকভাবে কম যা বাজারগুলোর লেনদেনের অবনতি ঘটায়। লেনদেনের শুরু থেকে বাজারগুলোতে সূচকের যে ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা ছিল দিনের শেষভাগে এসে তাতে কিছুটা ছেদ পড়ে। এ সময় বাজারগুলোতে বিক্রয়চাপ বেড়ে যায়। তবে দিনশেষে বৃদ্ধি পাওয়া সূচকের একটি বড় অংশই ধরে রাখতে সক্ষম হয় দুই বাজার।

প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ অক্টোবর ৩১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে ৫ অক্টোবর। পাঁচ হাজার ৪১৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে পৌঁছে যায় পাঁচ হাজার ৪৪৭ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে। তবে লেনদেনের বেশির ভাগ সময়ই সূচকটি পাঁচ হাজার ৪৬০ পয়েন্টের ওপরে অবস্থান করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শেষদিকে বিক্রয়চাপের ফলে সূচকটি এ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। এ সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭২ পয়েন্ট ও ২ দশমিক ০৪ পয়েন্ট। অনুরূপভাবে দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৯৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। সিএসইর এই প্রধান সূচকটি ৫ অক্টোবর সকালের ১৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট থেকে দিনশেষে স্থির হয় ১৫ হাজার ১৭৯ দশমিক ১৪ পয়েন্টে। এখানে বিশেষায়িত দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ১৬ ও ৫৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

সূচকের উন্নতি ঘটলেও গতকাল দুই পুঁজি বাজারেই লেনদেন কম হয়। ঢাকা শেয়ার বাজার ৫ অক্টোবর ৬১৯ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৭৭ কোটি টকা কম। ছুটির পূর্বে পুঁজি বাজারটির সর্বশেষ লেনদেন ছিল ৬৯৬ কোটি টাকা। একইভাবে লেনদেন হ্রাস পেয়েছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারেও। এখানে ১৬ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটিতে নামে লেনদেন। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, দিনের শুরুতে সূচকের বড় ধরনের উন্নতি ঘটায় বিনিয়োগকারিরা কিছুটা সতর্ক ছিলেনÑ যা দিনের লেনদেনে প্রভাব ফেলে।

এ দিকে ৫ অক্টোবরে বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকায় লেনদেনে স্বল্পমূলধনের কোম্পানিগুলোর ব্যাপক প্রাধান্য ছিল। এ তালিকায় বাজারের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি নিয়ে গড়া বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০-এর খুব বেশি কোম্পানি খুঁজে পাওয়া যায়নি। লেনদেনে ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ছিল নবম স্থানে। তালিকায় থাকা আরেকটি বেসরকারি কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ডিএসই-৩০ সূচকে জায়গা পেলেও কোম্পানিটির অবস্থা নিয়ে বাজারে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে কোম্পানিটির মূল্য-আয় অনুপাত সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ১৪ হাজার ৬৫০ আর সর্বশেষ অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ৭৩২। ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষে কোম্পানিটি ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় থাকা বাকি কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই তুলনামূলক কম মূলধনের। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দিনের শীর্ষে উঠে আসা সিভিও পেট্রো রিফাইনারি, সোনালী পেপার, ওরিয়ন ইনফিউশন ও কে অ্যান্ড কিউর মতো কোম্পানি। এ কোম্পানিগুলোই সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজি বাজারে আলোচনার তুঙ্গে। বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন এসব কোম্পানির প্রতি এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর অতিরিক্ত আগ্রহই প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বাজার থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কারণ এতে প্রতিনিয়ত ভালো কোম্পানিগুলো মার খাচ্ছে। ফলে বাজারে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা আসতে চাচ্ছে না। তাই স্বাভাবিক আচরণে ফিরতে পারছে না পুঁজি বাজার।

এ ছাড়াও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মূল্যবৃদ্ধিতে দাপট দেখাচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলো। ৫ অক্টোবরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে ৫ অক্টোবর ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল এক্সিম ব্যাংক। এ ছাড়া এ তালিকায় জায়গা করে নেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মতো কোম্পানিগুলো। তবে প্রকৃত অর্থে ভাল ব্যাংকগুলোর কোনো পাত্তা নেই। নেই অন্যান্য খাতের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর জায়গা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, একটি পুঁজি বাজারে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে বাজারের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ আয়ের পাশাপাশি পুঁজি বৃদ্ধিকেও সামনে রেখে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এখন যেভাবে বাজার চলছে, তাতে বলার অপেক্ষা রাখে না একটি চক্রের হাতেই বন্দী হয়ে আছের এসব। এ চক্রটি দ্রুত মুনাফা লাভের হাতিয়ার হিসেবেই বাজারকে ব্যবহার করে আসছে যেভাবে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাজারটিকে ব্যবহার করে আসছিল আগের সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা একটি চক্র। ●

অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৫ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে

Leave A Reply

Exit mobile version