অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বহুমুখী পাট পণ্য ও বস্ত্র পণ্য উৎপাদনের আরও বেশি বিনিয়োগ, গবেষণা এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিশ্ব ব্যাংককে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
২৫ সেপ্টেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভাকে বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং উপদেষ্টা চলমান প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সমাপ্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
পাট ও পাটজাত পণ্যকে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পাট বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সোনালি আঁশ পাট এক সময় ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে এ ধারায় কিছুটা ছেদ পড়লেও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে।
তিনি বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব সোনালি ব্যাগ ও জুট জিও টেক্সটাইল বহুমুখী পাটপণ্য ইত্যাদি উদ্ভাবনের ফলে দেশে-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৭০ ভাগ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় একটি খাত উল্লেখ করে তিনি বিশ্ব ব্যাংককে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত শিল্পে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ২৫টি সরকারি পাটকল ও ২৫টি বস্ত্রকলে উৎপাদন কার্যক্রম কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে মিলগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের শিল্প কারখানাগুলো কৌশলগতভাবে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত। সে কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত সহজে এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প ক্রমশ উন্নতি করছে।
বিশ্বখ্যাত মসলিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মসলিন কাপড় একসময় জগৎ বিখ্যাত ছিল। সরকার মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসলিন কাপড় বোনার সুতা তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। শিগগিরই বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বৈঠকে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা জানান, জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় এবং ক্রমবিকাশমান শিল্প। স্থানীয়ভাবে তৈরি জাহাজ রফতানি করার মাধ্যমেই মূলত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাজ নির্মাণ একটি প্রধান প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্ব ব্যাংক দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বিশ্ব ব্যাংক অঙ্গীকারাবদ্ধ।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ায় আবদৌলায়ে সেক উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি জানান, পাট, বস্ত্র, জাহাজ নির্মাণ- সব খাতেই নতুন নতুন প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেকের নেতৃত্বে বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। এ সময়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকসহ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ●
অকা/আখা/ফর/রাত/২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে