অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজার সূচকের অস্থিরতা কমছে না। প্রতিদিনই লেনদেনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিক্রয়চাপে অস্থির আচরণ করছে দুই পুঁজি বাজার সূচক। লেনদেনের শুরুতে সাবলীল আচরণ করা বাজার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বিক্রয়চাপের শিকার হচ্ছে। সাদা চোখে দেখলে যেখানে মনে হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা এর মাধ্যমে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন; বাস্তবে তা ঘটছে না। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বাজার সূচকের এমন কোনো উন্নতি ঘটেনি, যাতে হাতে গোনা কিছু কোম্পানি ছাড়া বাজারের মূল্যস্তরে বড় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই বিনিয়োগকারীরা এটাকে অস্বাভাবিক আচরণ হিসেবেই দেখছেন।
৬ অক্টোবর দেশের দুই পুঁজি বাজার সূচকের আচরণ ছিল দু’রকম। ঢাকা শেয়ার বাজারে সবগুলো সূচকের কমবেশি অবনতি ঘটলেও চট্টগ্রামে সবগুলো সূচকই কিছুটা উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে এর মধ্যেও ঢাকা বাজারে লেনদেনের বড় ধরনের উন্নতি ঘটে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ৬ অক্টোবর ৭৩৬ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিনের চেয়ে ১১৭ কোটি টাকা বেশি। ৫ অক্টোবর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৬১৯ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ১০ কোটি টাকা থেকে ১২ কোটিতে পৌঁছে লেনদেন।
লেনদেনের শুরুতে সূচকের বড় ধরনের উন্নতি ঘটলেও দিনশেষে তা ধরে রাখতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ অক্টোবর ২৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৫ হাজার ৪৪৭ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করা সূচকটি ৬ অক্টোবর দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৪২৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে। অথচ ঊর্র্ধ্বমুখী প্রবণতায় দিন শুরু করা সূচকটি বেলা ১১টার পরও অবস্থান করছিল ৫ হাজার ৪৮২ পয়েন্টে। আর এ পর্যায়ে সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় ৩৪ পয়েন্টের বেশি। লেনদেনের এ পর্যায়ে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হলে দিনশেষে প্রায় ২৪ পয়েন্ট হারায় সূচকটি। এতে সারা দিনে সূচকটির ওঠানামা ছিল প্রায় ৫৮ পয়েন্ট। একই সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭৬ ও ২ দশমিক ১১ পয়েন্ট। আবার দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবগুলো সূচকের কমবেশি উন্নতি ঘটে। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক এ দিন ১০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এখানে দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪৩ ও ১ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট।
এ দিকে পুঁজি বাজারে একসময় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা জ্বালানি খাত তাদের কাছে যেন ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এ খাতে সবচেয়ে বেশি মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি রয়েছে। এখানে তালিকাভুক্ত রয়েছে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, যেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি ছাড়াও এখানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ও পাওয়ার গ্রিড ও ডেসকোর মতো বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও আছে একটি সরকারি ও দু’টি বেসরকারি লুব্রিকেন্ট বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান যেগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দেয়ার রেকর্ড রয়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত দু’টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ও তিতাস গ্যাস সাম্প্রতিক সময়ে লোকসানের শিকার হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মৌল ভিত্তির দিক থেকে অনেক কোম্পানির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এ খাতটিই মূল্য-আয় অনুপাতের (পিই) দিক থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধরা যায়। বাজারের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৩ পিই এ খাতের। এ দিক থেকে ব্যাংকিং খাতের চেয়েও কম মূল্যস্তরে রয়েছে এ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানি। সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু কোম্পানি প্রতি অর্থ বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাসও এ খাতের কোম্পানিগুলোর রয়েছে। তবু কেন এ খাত বিনিয়োগকারীদের সাড়া পাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে বিনিয়োগকারীরা জানান, পুঁজি বাজারে এখন যা চলছে তা কোনো স্বাভাবিক আচরণ নয়। এখন পুরো বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে সুনির্দিষ্ট কিছু গ্রুপ, যারা বাজারের স্বাভাবিক আচরণকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো মার খাচ্ছে। শুধু জ্বালানি খাত বলে নয় বাজারের বেশির ভাগ মৌল ভিত্তির কোম্পানিই এখন আর পাত্তা পাচ্ছে না। অথচ এ কোম্পানিগুলোই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবার পছন্দের তালিকায় থাকার কথা। অথচ বাজারে এখন রমরমা চলছে কয়েকটি কম মূলধনের দুর্বল কোম্পানির, যেগুলো কাগজে-কলমে ভালো দেখালেও এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির আদৌ উৎপাদন কার্যক্রম চালু আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
৬ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শেষে লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে টেলিকমিউনিকেশন খাতের কোম্পানি রবি আজিয়াটা। এ দিন ২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৮৭ লাখ ১৪ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। লেনদেনের এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস। ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকায় কোম্পানিটির সাত লাখ ৫০ শেয়ার বেচাকেনা হয় ৬ অক্টোবর। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পি.পি. ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, সামিট এলায়েন্স পোর্ট এবং কে অ্যান্ড কিউ বাংলাদেশ।
৬ অক্টোবর ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয় সাধারণ বীমা কোম্পানি প্রগতি ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স। ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল এক্সিম ব্যাংক, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক, জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, রিলায়েন্স ওয়ান ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার এবং কে অ্যান্ড কিউ লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৬ অক্টোবর দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ দর কমেছে কোম্পানিটির। ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল আলহাজ টেক্সটাইলস। ডিএসইতে দরপতনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল জিএসপি ফিন্যান্স, ফ্যামিলিটেক্স, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, তুং হাই নিটিং এবং বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। ●
অকা/পুঁবা/ফর/সন্ধ্যা/৭ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 6 days আগে