অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করে, এবং সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার সামান্য উর্ধ্বমুখী হয়ে ৮.৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগের মাস অর্থাৎ আগস্ট মাসের ৮.২৯ শতাংশের তুলনায় ০.০৭ শতাংশপয়েন্টের বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যদিও এই হার গত বছরের একই মাসের ৯.৯২ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা অর্থনীতিতে একটি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার সংকেত দেয় এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমে আসার প্রমাণ প্রদান করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক ৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত এই হালনাগাদ তথ্যটি দেশের কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) এর উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত, যা মূলত ৪২টি শহর এবং গ্রামীণ এলাকার ১২টি জেলা থেকে সংগৃহীত মূল্যের তথ্যের উপর নির্ভর করে, এবং এই ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি ২০০৯-১০ ভিত্তিক ওয়েটেজ স্ট্রাকচার অনুসরণ করে যাতে খাদ্য খাতের ওয়েটেজ ৫৯.২১ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতের ৪০.৭৯ শতাংশ, ফলে এই সূচকগুলো অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মূল্যস্ফীতির সামান্য বৃদ্ধির পটভূমিতে খাদ্য খাতের অবদান বিবেচনাযোগ্য, যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭.৬৪ শতাংশ, যা আগস্টের ৭.৬০ শতাংশ থেকে মাত্র ০.০৪ শতাংশপয়েন্টের অতি সামান্য উন্নয়ন দেখায়, কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১০.৪০ শতাংশের তুলনায় এটি প্রায় ২.৭৬ শতাংশপয়েন্ট কম, যা খাদ্য উৎপাদন, আমদানি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলার উন্নতিতে ইঙ্গিত করে, বিশেষ করে চাল, মাংস, ডাল এবং সবজি জাতীয় খাদ্যের দামের অস্থিরতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার কারণে, যদিও বন্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই খাত এখনও অস্থিতিশীলতার শিকার। অন্যদিকে, খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার সেপ্টেম্বরে উঠেছে ৮.৯৮ শতাংশে, যা আগস্টের ৮.৯০ শতাংশ থেকে ০.০৮ শতাংশপয়েন্টের বৃদ্ধি, এবং গত বছরের ৯.৫০ শতাংশের তুলনায় ০.৫২ শতাংশপয়েন্ট কম, যা এই খাতের অধীনে থাকা পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং জ্বালানি-বিদ্যুতের মতো সেক্টরগুলোতে বৈশ্বিক তেলমূল্যের ওঠানামা, আমদানি শুল্কের পরিবর্তন এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহের চাপের প্রভাব প্রতিফলিত করে, যেখানে বিশেষ করে জ্বালানি এবং গ্যাসের দামের সামান্য উর্ধ্বলগ্নতা এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে। এই সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বার্ষিক ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হ্রাস (৯.৯২ শতাংশ থেকে ৮.৩৬ শতাংশ) একটি ইতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটারি পলিসি এবং সরকারের দাম নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসের ফলস্বরূপ, যেমন খাদ্য আমদানিতে সহজীকরণ এবং মুদ্রাস্ফীতি টার্গেটিং ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে ৫.০০-৭.০০ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি, তবে মাসিক ভিত্তিতে সামান্য বৃদ্ধি অর্থনীতির ক্ষীণতার ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ করে কর্মসংস্থানের হার কমে যাওয়া, রেমিট্যান্সের অবনতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপের মধ্যে। এই মূল্যস্ফীতির প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি পড়ে, যেখানে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা আরও হ্রাস পায়, ফলে দারিদ্র্যের হার বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়, এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার (যা সাম্প্রতিক আর্থিক বছরে প্রায় ৬.০০ শতাংশের কাছাকাছি) এতে বাধাগ্রস্ত হয়, যদিও খাদ্য খাতের স্থিতিশীলতা কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই চাপ কিছুটা প্রশমিত করতে সাহায্য করছে। ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ থেকে, অক্টোবর-ডিসেম্বর কোয়ার্টারে মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারকে বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে হবে, আমদানি নীতি সমন্বয় করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা মোকাবিলায় বাফার স্টক তৈরি করতে হবে, যাতে এই প্রবণতা টেকসইভাবে নিম্নমুদ্রাস্ফীতির দিকে অগ্রসর হয় এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করে। সামগ্রিকভাবে, এই তথ্য অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পথে একটি সতর্কতামূলক আশার আলো জ্বালায়, যদিও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য নীতিগত হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। ●
অকা/প্র/ই/সকাল/৭ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 7 days আগে