অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
রিক্সাচালক আমজাদ হোসেন রাজধানীতে আছেন ৬ বছর ধরে। বয়স ২৮। বিবাহিত। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করেন ফুপাতো বোন তারামনকে। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বেশ স্বচ্ছল। নিজের ও স্ত্রীর নামে দেশের বেসরকারি একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর মেয়াদী জীবন বীমা করা আছে। বীমাপত্রের সে ডিপিএসে প্রতি মাসে দু’জনের নামে ৫ শ’ টাকা করে ১০০০ টাকার কিস্তি দেন। চার বছর ধরে নিয়মিতভাবে কিস্তি দিয়ে আসছেন। বললেন পাশ বইয়েও প্রতি মাসে কিস্তির টাকা জমা দেয়ার প্রমাণ রয়েছে। দেশের বাড়ী রংপুরের মিঠাপুকুরের দূর্গাপুরে। সেখানে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও পিতামাতা থাকে। ২০ দিন থাকেন ঢাকায়। এ সময় প্রতিদিন ১৪/১৫ ঘন্টা রিক্সা চালিয়ে খরচ বাদে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা হাতে থাকে। পশ্চিম রামপুরার মেসের একটি ঘরে থাকেন আমজাদসহ মোট ৬ জন। ৪ জন রিক্সা এবং ২ জন সিএনসি চালান। প্রতি মাসে সিট ভাড়া তারও দেড় হাজার টাকা।
গত ৫ অক্টোবর এ প্রতিবেদক রাজধানীর রামপুরা থেকে তার রিক্সার যাত্রী। সকালে রওনা হয়েছেন মতিঝিল অভিমুখে। ৫৫ মিনিটের যাত্রা পথে ভদ্র যুবক আমজাদের সঙ্গে তার জীবনের বিস্তারিত আলাপ। নবম শ্রেণি অবধি পড়ালেখা করেছেন তিনি। ২০১২ সালে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে উপার্জনের জন্য ইরাক গিয়েছিলেন। রাজধানীর বাগদাদে নির্মাণ একটি প্রতিষ্ঠানে প্লামবারের কাজ করেছেন। মাসিক রোজগারও ছিলো সন্তোষজনক। প্রতি মাসে দেশে ২০- ৩০ হাজার টাকা পাঠাতেন। দুই বছর কাজ করার পর ইরাকের সরকার প্রধানের ক্ষমতা পরিবর্তন হয়! সে কারণে বাংলাদেশের সরকার ইরাকে কর্মরত শ্রমিকদের দেশে ফেরত নিয়ে আসে। ২০১৪ আমজাদ হোসেনও দেশে চলে আসেন। গ্রামের বাড়ী মিঠাপুকুরের দূর্গাপুরে বসতঘর ছাড়াও প্রায় ২৫ শতাংশ ফসলী জমি রয়েছে তাদের। নিজেরাই চাষাবাদ করেন। তিন ভাই ২ বোন এবং মা ও বাবা একসঙ্গে থাকে। মাঠে চাষাবাদের কাজ ভালো লাগে না তার। স্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে রেলগাড়িতে করে চলে আসেন ঢাকায়। বাড্ডায় এসে আমজাদ তার এলাকার এক বন্ধুর কাছে ওঠেন। পরের মাস থেকেই বাস তার পশ্চিম রামপুরায়। ওই মাস থেকেই রিক্সা চালাতে শুরু করেন। দীর্ঘ তিন মাস পর বাড়ী ফিরেন। রোজগারের নগদ ৪৮৫৩০ টাকা স্ত্রী তারামনের হাতে তুলে দেন আমজাদ। সে যাত্রায় দেশের বাড়ী থাকেন ২১ দিন। ঢাকায় ফিরে মেসের কাছে গ্যারেজ থেকে আবার রিক্সা নিয়ে চালাতে শুরু করেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে আমজাদ জানালেন, ব্যাংক ও এলাকার সমিতিতে মাসে মাসে টাকা সঞ্চয় করেন। করোনার অতিমারির মধ্যে প্রতি মাসে বাড়ী যেতে পারেননি তিনি। মাসের দশদিন পরিবারের সঙ্গে থাকেন। দেশের বাড়ীতে ছেলেকে স্কুলে দিবেন আগামী বছর। মেয়েটার বয়স দেড়। জানালেন ৬ বছরে তিনি নিজের অর্থে এলাকায় ৯ শতক জমি ও একটি পুকুর কিনেছেন। বললেন ‘রোজগারের ২০ লাখ টাকা হাতে জমলে পরে দেশে চলে যাবো একেবারে। গ্রামে গিয়ে মাছ চাষ করবো। ঘর পুরোটা পাকা করবো।’ প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে আমজাদ জানান, ২০ লাখ নগদ পুঁজি হতে আরও বছর দুয়েক লাগবে তার। জমানো নগদ টাকার পরিমাণ এখন আমজাদের ৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদক স্বাবলম্বী রিক্সাচালক আমজাদের জীবনের গল্প শুনে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন! ততক্ষণে মতিঝিল গন্তব্যে পৌছে গেছে যাত্রী, আমজাদ ও তার রিক্সা বাহন। দীর্ঘশ্বাসে নেমে আরোহী বললেন ‘আপনি দেখি আমজাদ, আমার চেয়েও স্বচ্ছল।’ ভাড়া হাতে নিয়ে মাথা নাড়ায় রিক্সাচালক আমাজাদ হোসেন।
#
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 years আগে
