অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স পর্যালোচনা শেষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২০টি কোম্পানি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বিভিন্ন হারে নগদ বা বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তবে ২টি কোম্পানি—বিবিএস কেবলস ও আজিজ পাইপস—এই বছর কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিগুলো এই বিষয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে।
ঘোষণাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উদার ডিভিডেন্ড দিয়েছে হিমাদ্রি লিমিটেড, যারা ৫ শতাংশ নগদ ও ১০০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ৮১ পয়সা। রেনাটা লিমিটেড ও এমজেএল বাংলাদেশ—দুটি বড় মূলধনী কোম্পানি—প্রত্যেকেই ৫৫ শতাংশ করে নগদ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। রেনাটার ইপিএস ১৭.৪৬ টাকা, আর এমজেএল বিডির ইপিএস ১১.৩৬ টাকা। সোনালি পেপার ৪০ শতাংশ নগদ, একমি ল্যাবরেটরিজ ৩৫ শতাংশ নগদ, হা-ওয়েল টেক্সটাইল ও শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি ২০ শতাংশ করে নগদ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
এর বাইরে ইউনিক হোটেল ১৬ শতাংশ নগদ, স্টার অ্যাডহেসিভ ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ, এডিএন টেলিকম, সিমটেক্স, রানার অটো, নাভানা সিএনজি ও আফতাব অটো প্রত্যেকেই ১০ শতাংশ করে নগদ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। মোস্তফা মেটাল ২ শতাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়াম ১ শতাংশ, কুইন সাউথ ও এম.এল ডাইং ০.৫০ শতাংশ করে নগদ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি লোকসান থাকা সত্ত্বেও সামান্য ডিভিডেন্ড দিয়েছে—যেমন আফতাব অটো, যার ইপিএস ঋণাত্মক ১.৩৭ টাকা; নাহি অ্যালুমিনিয়ামের ইপিএস ঋণাত্মক ৭.১৮ টাকা; এবং কুইন সাউথের ইপিএস ০.২০ টাকা।
অন্যদিকে বিবিএস কেবলসের ইপিএস ঋণাত্মক ৪.০৫ টাকা এবং আজিজ পাইপসের ইপিএস ঋণাত্মক ১০.১২ টাকা হওয়ায় তারা কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ, এই বছর শুধুমাত্র ১৮টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টনের ঘোষণা দিয়েছে, আর দুটি কোম্পানি ডিভিডেন্ডহীন থেকেছে।
ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওষুধ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। বিশেষ করে রেনাটা, একমি ল্যাব ও এমজেএল বিডি ধারাবাহিকভাবে উচ্চ মুনাফা ধরে রেখেছে এবং উদার লভ্যাংশ প্রদান করেছে। অন্যদিকে প্রকৌশল, অটোমোবাইল ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বেশ কিছু কোম্পানি লোকসানে থাকায় শেয়ারহোল্ডারদের নগণ্য বা প্রতীকী ডিভিডেন্ড দিয়েছে, এমনকি কিছু কোম্পানি একেবারেই দেয়নি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চলতি অর্থবছরে ডলার সংকট, কাঁচামাল আমদানি ব্যয়ের বৃদ্ধি, উচ্চ সুদের হার ও ভোক্তা ব্যয় সংকোচনের কারণে উৎপাদনশীল খাতগুলোতে মুনাফা সংকুচিত হয়েছে। ফলে অনেক কোম্পানি নগদ সংরক্ষণের নীতি অনুসরণ করে সীমিত বা প্রতীকী ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এতে বোঝা যায়, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যয়চাপের প্রভাবে করপোরেট খাতের মুনাফা পুনরুদ্ধার এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।
তবে শক্তিশালী ব্যালান্সশিট ও স্থিতিশীল ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির কারণে রেনাটা, এমজেএল বিডি, একমি ল্যাব এবং হিমাদ্রির মতো কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে। সামগ্রিকভাবে, এ বছরের ডিভিডেন্ড ঘোষণাগুলো বাজারে মিশ্র বার্তা দিয়েছে—একদিকে ভালো পারফর্ম করা কোম্পানিগুলোর উচ্চ ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছে, অন্যদিকে দুর্বল কোম্পানিগুলোর নিম্ন বা শূন্য ডিভিডেন্ড বাজারে উদ্বেগের ইঙ্গিত দিয়েছে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২৮ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 19 hours আগে

