অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
অর্থনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কোনো শর্ত সরকার চট করে মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আইএমএফ এর কোনো শর্ত চট করে মেনে নিয়ে আমরা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো অবস্থায় পড়তে চাই না। আইএমএফ এর কোনো অর্থ ছাড়াই আমরা আজকের এ পর্যায়ে চলে এসেছি। আমরা তো এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোনো বাজেট সহায়তাই নেইনি।
৪ এপ্রিল ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সভার পর এডিবির দণি, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তদবিলের (আইএমএফ) সহায়তা না পেলেও ম্যানেজেবল এবং বাস্তবসম্মত একটি বাজেট দেয়া হবে। তিনি বলেন, এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন। তিনি আমাদের ইকোনমির অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা বলেছি ইকোনমির অবস্থা আগের চেয়েও ‘বেটার’। আমাদের মাইক্রো ইকোনমিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে অনেক সংস্কার করেছি। সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা সেটা হলো ‘ট্রেড’। বাণিজ্য বিষয়ে বেসরকারি খাতে একটি সামিট অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের যে বিনিয়োগ সামিট হয়েছে সেটার প্রশংসা করেছে তারা। এডিবি এখন আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়নে সহায়তা করছে। এটা তারা করতেই থাকবে। আমরা যেটা বলেছি আমাদের বাজেট সাপোর্টের বিষয় তাদের যা দেয়ার কথা ছিল সেটা ছাড়ের কথা বলেছি। এ েেত্র তারা আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি যে তাদের সাথে আলোচনা চলছে। বেসরকারি খাতের ইনভলভমেন্টটা তারা চাচ্ছে। এেেত্র আমাদের ইডকল আছে, বিআইএফ আছে, আইএফসি আছে। তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। এডিবি বলছে প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য ঢাকাতে একটা কর্মশালার আয়োজন করতে।
আইএমএফ এর ঋণের কিস্তি পাওয়া বিলম্ব হওয়াতে এডিবির বাজেট সাপোর্টে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে তারা মাইক্রো ইকোনমির বিষয় জানতে চেয়েছে। এ বিষয় আমরা আলোচনা করছি। আশা করছি সমাধান হয়ে যাবে। তবে আইএমএফ বলছে- আমরা যে মাইক্রো ইকোনমিকে ভালো করছি সেটার একটা চিঠি পেলে তারা আশ্বস্ত হতো। আমরা বলেছি ‘আমরা সেটা দেবো। তবে এখনই না, ধীরে-সুস্থে। আমরা চট করে আইএমএফ এর কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না। কারণ আইএমএফ শর্ত মেনে আমরা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো হতো পারব না। আমরা আইএমএফ এর অর্থ ছাড়াই ভালো করছি। আমরা তো এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট নেইনি।
আমাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে এডিবির সন্তুষ্টি কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এডিবি বলেছে অন্যান্য দেশের তুলনায় তোমাদের অর্থনীতি ভালো করছে। এেেত্র আমরা আশাবাদী। আমাদের অর্জন নিয়ে তারা খুশি। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আমরা চেষ্টা করছি, এটাও তারা জানে। আমরা তাদের বলেছি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে এডিবি খেয়াল রাখছে। তারা আমাদের প্রকল্প সহায়তাসহ ব্যাংকিং খাত ও এনবিআর এ যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলোতে তারা সহায়তা করবে। আমাদের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয় বাজেট সাপোর্টের জন্য আমরা কর বাড়াচ্ছি, করের পরিধি বাড়াচ্ছি। বাজেট সাপোর্ট নিয়ে যদি আইএমএফ অযৌক্তিক কিছু শর্ত দেয় তাহলে আমরা সেটা দেখবো। আমাদের মূল ফোকাস হলো বাজেটে খরচ কমানো, দতা বাড়ানো। আমরা তো ব্যয়ের ব্যাপারে সচেতন। প্রকল্পের বিষয়ও আমরা অনেক সাবধান। দুটো মিলে বাজেট সাপোর্টে হই হুল্লোড় পড়ে যাবে বিষয়টা এমন না। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সাপোর্ট নাও পাই তাও বাজেট দেবো। আমরা প্রতিজ্ঞ যে আমরা বাজেট দেবো। ম্যানেজেবল ও বাস্তবসম্মত একটা বাজেট দেবো।
আমাদের প্রকল্প সহায়তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন বাজেট সাপোর্ট। সে েেত্র এডিবিকে শর্ট টার্মে কোনো সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজেট সাপোর্টের একটা বিষয় আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তাদের সফট ল্যান্ডিংয়ের উইন্ডো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। তবে আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বাজেট সহায়তায় আমরা তাদের বলেছি ‘ওসিএফ’ ফান্ড থেকে সহায়তা করতে। কিন্তু তারা বলেছে এ ফান্ড তো লিমিটেড। তবে আমরা এটা দেখব। ●
অকা/আখা/ফর/রাত
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে