অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
এপ্রিলেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, সদ্য বিদায়ী এপ্রিলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবে একক মাস হিসাবে বিদায়ী মাসে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো হুন্ডি তৎপরতা কমে যাওয়া। একই সাথে রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্যেও কিছু শিথিলতা আনা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে অনেক ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকটা অলিখিত সম্মতি রয়েছে। যার ফলে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে বাড়তি মূল্যে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। তবে এর সুবিধা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রবাসীরা পাচ্ছেন না। এর সুবিধা ভোগ করছেন বিদেশী মালিকানাধীন রেমিট্যান্স হাউজগুলো। তারা তাদের দেশের বেঁধে দেয়া অভিন্ন দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। কিন্তু যে ব্যাংক বেশি মূল্য দিচ্ছে তাদেরই বেশি হারে রেমিট্যান্স সরবরাহ করছে। রেমিট্যান্স আহরণে অনেকটা অশুভ প্রতিযোগিতাও দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে বাড়তি রেমিট্যান্স আসছে এটাই স্বস্তির বিষয়। কারণ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বেহিসাবী আমদানি দায় বকেয়া রেখেছে। একই সাথে বেসরকারি খাতে দেদারছে বায়ার্স ও সাপ্লাই ক্রেডিটের মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য না এনেও দায়সৃষ্টি করা হয়েছে। এর বিপরীতে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এর ফলে বকেয়া বৈদেশিক দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক দায় মেটাতে অনেকাটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। অপরদিকে এর ফলে চলতি হিসাবের ভারসাম্যও ঋণাত্মক অবস্থান থেকে বের হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ছিল ঋণাত্মক ৪০৭ কোটি ডলার, চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ১২৬ কোটি ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঋণাত্মক ধারা কমে আসায় সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যও উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে সামগ্রিক হিসাবের লেনদেনেরে ভারসাম্য ছিল ঋণাত্মক ৪৪৪ কোটি ডলার, চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে তা কমে এসেছে ১১১ কোটি ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৪৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা প্রায় সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ৯১১ বিলিয়ন ডলার, বা প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ১০ মাসের চেয়ে চলতি অর্থ বছরের ১০ মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যে হারে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে তা ২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে, যা হবে একক বছর হিসেবে নতুন মাইল ফলক। ●
অকা/আখা/ফর/রাত/৪ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে