অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
অবশেষে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলো দেশের পুঁজি বাজার। ৪ মে প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সূচকের উন্নতি ঘটতে দেখা গেছে। এর আগে ১৩ এপ্রিল থেকে টানা পতনের মধ্যে ছিল পুঁজি বাজরগুলো। মাঝখানে ২৭ এপ্রিল দুই পুঁজি বাজারে সূচকের নামমাত্র উন্নতি ঘটলেও বাকি দিনগুলোতে সূচকের বড় ধরনের অবনতি রেকর্ড করা হয়। ৪ মে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের মাঝামাঝি সময়ে এসে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে প্রধান পুঁজি বাজারটি। তবে একই সময়ে দেশের দ্বিতীয় বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। এখানে সব সূচকের কমবেশি অবনতি ঘটে।
ঢাকা শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ মে দিনশেষে ৩৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সকালে ৪ হাজার ৯১৭ দশমিক ৯১ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বেলা ১টার দিকে নেমে আসে ৪ হাজার ৯১০ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে ৭ পয়েন্টের মতো অবনতি ঘটে সূচকটির। লেনদেনের এ পর্যায়ে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে সূচক। বেলা ২টার পর সূচকটি পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে। অর্থাৎ এ সময় সূচকের ৫২ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে। তবে দিনশেষে সমন্বয়ের পর সূচকের ৩৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট টিকে ৪ হাজার ৪৫৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে স্থির হয়। এ সময় ডিএসইর অন্য দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১১ দশমিক ১৩ ও ৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট।
এ দিকে ব্যাপকভাবে মন্দায় আক্রান্ত পুঁজি বাজারে বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাংকের লভ্যাংশ সংক্রান্ত জটিলতা। আইনি জটিলতায় আটকে গেছে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা। ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত পরিপালন নিয়ে এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের সর্বশেষ ২০২৪ অর্থ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে পারেনি। ফলে লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও নেয়া যাচ্ছে না।
৪ মে ডিএসই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা তথ্যে দেখা যায় কমপক্ষে ১৮টি ব্যাংক লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এদের কোনো কোনোটি ইতঃপূর্বে ঘোষিত বোর্ড সভা স্থগিত করেছে, কোনো কোনোটি বোর্ড সভা করলেও আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে না পারায় লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। আবার আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আইনি সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি সময় দেয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে নতুন করে অনুমতি চাইতে হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
প্রসঙ্গত, দেশের ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাববছর হিসেবে ক্যালেন্ডার বছরকে অনুসরণ করে থাকে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে এদের হিসাববছর শেষ হয়েছে। বিধি অনুসারে, হিসাববছর শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও প্রকাশ করতে হয়। ৩০ এপ্রিল এ সময় শেষ হয়েছে। শেষ দিন ২০টিরও বেশি ব্যাংকের পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সৃষ্ট জটিলতার কারণে ১৮টি ব্যাংক তাদের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। এদের কয়েকটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হলেও ওই সভার আলোচ্যসূচি থেকে আর্থিক প্রতিবেদনকে বাদ দেয়া হয়। অন্যগুলো ওই পথে না গিয়ে সরাসরি সভাই স্থগিত করে।
যেসব ব্যাংক তাদের ঘোষিত পর্ষদ সভা স্থগিত করেছে অথবা আলোচ্যসূচি থেকে আর্থিক প্রতিবেদন বাদ রেখেছে, তারা ইতোমধ্যে এ তথ্য দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে।
ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
প্রত্যেক তফসিলি ব্যাংককে লভ্যাংশ ঘোষণার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু এবার নিরাপত্তা সঞ্চিতিসহ নানা ইস্যুতে ছাড়পত্র নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। কারণ বিধি অনুসারে, প্রতিটি ব্যাংককে তাদের খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে হয়। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ নির্দেশনায় বলেছে, যারা সঞ্চিতি রাখার শর্ত পরিপালন করতে পারেনি বা এর জন্য সময় নিয়েছে তারা লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। অন্য দিকে ৫ আগস্টের পর ব্যাংকগুলোতে মালিকানা পরিবর্তনের পর নানা কৌশলে আড়ালে রাখা অনেক খেলাপি ঋণের তথ্য বের হয়ে আসছে। এ দিকে পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকও আইনকানুন প্রয়োগে আগের চেয়ে কঠোর অবস্থানে। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। আর এ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা যাতে আটকে গেছে বেশির ভাগ ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার বিষয়।
সূচকের উন্নতির পাশাপাশি ৪ মে ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। এদিন ৩৯৯ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয় ডিএসইতে যা আগের দিন অপেক্ষা ৭৩ কোটি টাকা বেশি। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজারটির লেনদেন ছিল ৩২৬ কোটি টাকা। এ সময় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৫টি হাওলায় ১৮ কোটি ৭১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৮টি সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়।
লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দিনের শীর্ষে ছিল দি সিটি ব্যাংক। ১৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় ব্যাংকিং খাতের এ কোম্পানিটির ৭৪ লাখ ১১ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয় ৪ মে। ১৬ কোটি ২ লাখ টাকায় ২৬ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ার লেনদেন করে দিনের দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল বিচ হ্যাচারি। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে উত্তরা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লাভেলো আইসক্রিম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ও শাইন পুকুর সিরামিকস। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৪ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে