অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
রাজস্ব সংগ্রহের বড় কোনও উৎসের সন্ধান না পাওয়ায় আগামী বাজেট বড় হচ্ছে না এটি নিশ্চিত। তবে বাজেট হবে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী। এবারের বাজেটে থাকছে কর প্রশাসন সহজ করার উপায়। অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনা এবং বিনিয়োগ ও ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ তৈরির কয়েকটি কৌশলও থাকছে এতে। এবারের বাজেটের লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানো এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। বাজেটে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সব কিছু ঠিক থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২ জুন নতুন অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। পরে তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাস হবে। নির্বাচিত সরকারের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এক্ষেত্রে সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুইটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
সূত্র জানিয়েছে, উন্নয়নের জন্য রাজস্ব অপরিহার্য মনে করে বর্তমান সরকার। তাই রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে এ বছরের জাতীয় বাজেটে যৌক্তিকভাবে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আদায় বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করে সরকার। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে বিধায় রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর জন্যই এটি করা হচ্ছে। সরকার মনে করে কাক্সিক্ষত রাজস্ব সংগ্রহ করতে না পারলে অগ্রগতি নিশ্চিত ব্যর্থ হবে।
জানা গেছে, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকতে পারে নতুন বাজেটে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মতো ২০২৫-২৬ অর্থ বছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে। বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থ বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। তারপরও আগামী অর্থ বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ। চলতি অর্ব ছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে এরইমধ্যে ৫.২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হতে পারে, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে রয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কর আদায় না হওয়ায় চলতি অর্থ বছরে রাজস্বের লক্ষ্য কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২১ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থ বছর ৬ মাসে এডিপি খাতে খরচ হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৫ কোটি টাকা। অথচ এ বছর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতেই গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এটি হবে প্রথম বাজেট। আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। প্রতি অর্থ বছরের জুন মাসের কোনও বৃহস্পতিবারকে বাজেট ঘোষণার জন্য বেছে নেয়া হয়। এবারই তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। তবে বাজেট ঘোষণার পর দিন রেওয়াজ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থ উপদেষ্টা। পরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট পাস হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান জানিয়েছেন, দেশে নিবন্ধিত ১ কোটি ৪৫ লাখ করদাতার মধ্যে প্রকৃত কর প্রদান করেন মাত্র ৪৫ লাখ জন, যার মধ্যে ৩০ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্নধারী। কর ব্যবস্থায় ডিজিটাল অগ্রগতি হচ্ছে। গত বছর অনলাইনে ৪ লাখ রিটার্ন জমা পড়লেও এবার তা ১৫ লাখে পৌঁছেছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নানা কারণে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের নতুন বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। নতুন করে বড় কোনও প্রকল্প নেয়া হবে না। যেসব বড় প্রকল্প আছে সেগুলোতে অর্থায়ন চলবে, তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ছোট হবে।’ আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে কর্মসংস্থান বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ হবে। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট সংক্ষিপ্ত আকারে ৫০-৬০ পৃষ্ঠার বক্তব্যে হবে। আসছে অর্থ বছরে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনার চেষ্টা থাকবে। সরকার বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট করতে চায়। যেখানে পরবর্তী সরকারের জন্য একটা ফুট প্রিন্ট রেখে যেতে চাই। সরকার মুখরোচক কিছু করতে চায় না। ●
অকা/আখা/ফর/বিকাল/১২ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 month আগে