অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
এক সপ্তাহের নেতিবাচক বাজার আচরণ দেশের প্রধান পুঁজি বাজারটির মূলধনের সাত হাজার কোটি টাকার বেশি হাওয়ায় উড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ২০ ধেকে ২৪ এপ্রিল, পাঁচটি কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন হারিয়েছে সাত হাজার ৮৬ কোটি টাকা যা মোট বাজার মূলধনের ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে পুঁজি বাজারটির মূলধন ছিল ছয় লাখ ৭০ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা, যা গত সপ্তাহান্তে দাঁড়ায় ছয় লাখ ৬৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকায়।
এ দিকে পুঁজি বাজারের সাম্প্রতিক সময়ে টানা দরপতনের ফলে সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিএসইর সদস্যভুক্ত স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২৪ এপ্রিল বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বারিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জরুরি কমিশন সভায় বাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের পরিপ্রেেিত স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরণের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, শর্ত থাকে যে, এ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য যেসব স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারের নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লস রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের ওপর প্রভিশন সংরণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পোর্টফোলিওর মার্জিন ঋণ হিসাবে আদায় না হওয়া লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাজারের বর্তমান মন্দা পরিস্থিতির বিচারে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে প্রভিশনিং সংরণের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তবে বিএসইসি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরণের সময়সীমা বাড়িয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজি বাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহের মোট পাঁচ কর্মদিবসের সব ক’টিতেই নেতিবাচক আচরণের শিকার ছিল দেশের দুই পুঁজি বাজার। এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স মোট ১২৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট হারায়। অন্য দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৩০ দশমিক ৩৮ ও ৩৯ দশমিক ০১ পয়েন্ট। এ সময় বাজারটিতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫৭টির দাম বাড়লেও কমেছে ৩২৪টির। তবে ১৫টি সিকিউরিটিজের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
বিগত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির গড়ে মোট ১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে গড়ে ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকার। তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের গড়ে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানি হলোÑ শাহজিবাজার পাওয়ার, শাইনপুকুর সিরামিকস, ফাইন ফুডস, এসিআই লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক এবং লাভেলো আইসক্রিম।
একই সময় লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে জ্বালানি খাতের বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি শাহাজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র মতে, গত সপ্তাহে শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ছয় টাকা ১০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ারদর বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল এসইএমএল লেকচার ফান্ড।
এ সময় সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানি হচ্ছে সেনা ইন্স্যুরেন্স, ডরিন পাওয়ার, অলটেক্স, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, ফাইন ফুডস, প্রভাতী ইন্সু্যুরেন্স এবং গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শীর্ষে ছিল বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। সমাপ্ত সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই দর হারানো বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা বা ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ারদর কমেছে ২৪ শতাংশ। আর ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ শেয়ারদর হারিয়ে পতনের তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল খুলনা পেপার।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ছিলÑ উত্তরা ব্যাংক, ইবিএল, এডিএন টেলিকম, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, আমরা নেটোয়ার্ক এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২৭ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 weeks আগে