অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে উল্টো চিত্র দেখালো দেশের পুঁজি বাজার। ৭ মে পাক-ভারত যুদ্ধের খবরে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের বিক্রয়চাপে হারিয়ে বসা সূচকের দুই তৃতীয়াংশই ৮ মে ফিরে পেয়েছে দেশের পুঁজি বাজার। একদিনের ব্যবধানে সূচকের বড় ধরনের উল্লম্ফনে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক আচরণে ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেন কিছুটা কমলেও বেড়েছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে।
দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ মে ৯৯ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বেড়েছে। ৮ মে আগের দিনের ৪ হাজার ৮০২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৯০২ দশমিক ২৭ পয়েন্টে। এভাবে আগের দিনের হারানো ১৪৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট থেকে প্রায় ১০০ পয়েন্ট ফিরে পেল পুঁজি বাজারটি। বাজারটির অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ ফিরে পায় যথাক্রমে ২৭ দশমিক ২৩ ও ২৭ দশমিক ০৩ পয়েন্ট। আগের দিন এ দু’টি সূচকের যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৩৪ ও ৪১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট হারিয়েছিল ডিএসই।
অপর দিকে দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৮ মে ১১৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়েছে। এখানে অপর দু’টি সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১০৩ দশমিক ০৫ ও ৬০ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট।
এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজি বাজারগুলো তীব্র মন্দার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছিল। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা, আর্থিক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যস্ত সময় পার করলেও অর্থনীতির বৃহত্তর খাত পুঁজি বাজার নিয়ে খুব বেশি এগোতে পারেনি। তাই বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় ঠিক করার উদ্দেশ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১১ মে দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনায়’ এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে পুঁজি বাজারের শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতি বলে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ২০১০ সালের ভয়াবহ পুঁজি বাজার বিপর্যয়ের পর তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে লোকদেখানো কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও বরাবরই নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ দেশের দুই পুঁজি বাজারের সব কিছু সরকারের ঘনিষ্ঠজনদের ইশারা-ইঙ্গিতে এক ধরনের লুটপাটের মধ্যেই চলছিল। অনিয়ম, দুর্নীতি, কারসাজি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সরাসরি হস্তক্ষেপে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, আস্থাহীনতা ইত্যাদি কারণে বাজারের অবস্থা একেবারেই নাজুক হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা তলানিতে পৌঁছলে তা আড়াল করতে বিগত সরকারের সময়ে বিএসইসি ফোরপ্রাইস আরোপ করে রাখে। তাতে কৃত্রিমভাবে পতন ঠেকানো গেলেও আস্থাহীনতা আরো বেড়ে যায়। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাপক লুটপাটের চিত্র জনসমক্ষে চলে এলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর জেরে পুঁজিবাজার আরো বেসামাল হয়ে ওঠে।
পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টায় দেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু পুঁজি বাজারে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন তো দেখাই যায়নি, বরং অবস্থা দিন দিন আরো নাজুক আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে গত বছরের ১৮ আগস্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি পুঁজি বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে অতীতের কিছু কিছু অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভেতর থেকেই বাধার সম্মুখীন হন। এক্ষেত্রে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে কমিশন বিভিন্ন অনিয়মের কারণে একজন নির্বাহী পরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলে গত ৫ মার্চ তারা বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে রাখে। সেই সাথে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পদত্যাগের জন্য হুমকি দেয়। ফলে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।
এতে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে শান্ত হলেও এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিপূর্ণ সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আর অত্যন্ত সংবেদনশীল পুঁজি বাজারে এর প্রভাব চলতে থাকে। এপ্রিলে বাজারের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠে। এমন অবস্থায় তিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে কয়েক দফায় বিােভ করেছেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তপে চেয়ে চিঠিও দিয়েছেন। তবে এতদিন পর্যন্ত সরকার খুব একটা নড়াচড়া করেনি। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠলে সরকার নড়েচড়ে বসে। এর প্রেেিতই আলোচিত বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ১১ মে দুপুর ১২টায় পুঁজি বাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ” বিষয়ক একটি সভা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’-তে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বিএসইসি চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৮ মে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 5 days আগে