অর্থকাগজ ডেস্ক ●
সূচকের পতনে আরো একটি সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজি বাজার। এ নিয়ে টানা তিনটি সপ্তাহ নেতিবাচক প্রবণতার মধ্য দিয়ে পার করল পুঁজি বাজারগুলো। এ সময় কর্মদিবস ছিল মোট ১৩টি, যার প্রতিটিতেই অবনতি ঘটে পুঁজি বাজার সূচকের। সর্বশেষ ১০ এপ্রিল পুঁজি বাজারে সূচকের উন্নতি ঘটেছিল। সে দিন প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২০৫ পয়েন্টে। ৩০ এপ্রিল সূচকটি নেমে আসে ৪ হাজার ৯১৭ পয়েন্টে। অর্থাৎ উল্লিখিত সময়ে সূচকটির অবনতি ঘটে ২৮৮ পয়েন্ট।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি ৩০ এপ্রিল ১৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৪ হাজার ৯৩৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বুধবার দিনশেষে নেমে আসে ৪ হাজার ৯১৭ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ ১ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট হারায়। তবে ডিএসই শরিয়াহ নামমাত্র উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
অন্য দিকে দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৯ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট অবনতির শিকার হলেও বাজারটির অপর দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৪৭ ও ১ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতি সত্ত্বেও ৩০ এপ্রিল দুই পুঁজি বাজারেই লেনদেনের উন্নতি ঘটে। ঢাকা শেয়ার বাজার ৩০ এপ্রিল ৩২৬ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৩৫ কোটি টাকা বেশি। ২৯ এপ্রিল বাজারটির লেনদেন ছিল ২৯১ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে ১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা থেকে ৪১ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় পৌঁছে লেনদেন। সে হিসাবে বাজারটিতে এ দিন ৩০ কোটি টাকা বেশি লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছে।
এ দিকে পুঁজি বাজারের মন্দা কাটাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নতুন কর্মপরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়েছে। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় এক জরুরি সভায় এ কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে কমিশনের পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২৯ এপ্রিল পুঁজি বাজারে আস্থা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর উপস্থিতিতে বিএসইসিতে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির তিন কমিশনার মু: মুহসিন চৌধুরি, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দেলওয়ার হোসেন, পুঁজি বাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও কমিশনের নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পুঁজি বাজারে আস্থা বৃদ্ধিতে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সূচকের টানা পতনের কারণ নির্ণয়ে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামায় বাজার সূচককে বেশি প্রভাবিত করে সেসব সিকিউরিটিজে কোনো সেল প্রেশার ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা এবং থাকলে তার কারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ ছাড়া বিনিয়োগ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে টকশো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনস্টিটিউটকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরিতে সম্পৃক্ত করা, ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজি বাজার সম্পর্কিত ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ ও বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নেয়া।
পাশাপাশি আইপিওর মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো, বহুজাতিক কোম্পানি যারা দীর্ঘ দিন ধরে এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে অথচ তালিকাভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে এগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া এবং স্থানীয় ওষুধ ও টেক্সাটাইল খাতের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া। আকর্ষণীয় করছাড় সুবিধা প্রদান, ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণসুবিধা কমিয়ে দেয়া ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজি বাজারকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে পুঁজি বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা ছাড়াও বিনিয়োগকারীদের সুবিধা মাথায় রেখে আসন্ন বাজেটে লভ্যাংশ আয়ের ওপর ও পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ওপর করছাড় সুবিধার ব্যবস্থা রাখা।
২৯ এপ্রিল দেশের দুই বাজারেই লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগ দরপতনের শিকার হয়। ঢাকা শেয়ার বাজারের লেনদেন হওয়া ৩৯৫টি কোম্পানির মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে ১৫৮টির। দরপতনের শিকার ছিল ১৭৫টি। অপরিবর্তিত ছিল ৬২টি কোম্পানির শেয়ারদর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে লেনদেন হওয়া ২৩৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে ৮৮টির দাম বাড়ে, ১১৬টির কমে এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত থাকে।
ডিএসইতে ৩০ এপ্রিল লেনদেনের শীর্ষে ছিল ব্যাংকিং কোম্পানি দি সিটি ব্যাংক। ১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৮২ লাখ ৪৫ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ৩০ এপ্রিল। ১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় ৯২ লাখ ২২ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে মিডল্যান্ড ব্যাংক উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনে শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে বিচ হ্যাচারি, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, লাভেলো আইসক্রিম, উত্তরা ব্যাংক, মাগুরাপ্লেক্স, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি ও পূবালী ব্যাংক।
একই সময়ে চট্টগ্রাম বাজারে লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয় কোম্পানিটির। এ ছাড়া জিপিএইচ ইস্পাতের লেনদেনের পরিমাণ ছিল সাত কোটি ১০ লাখ টাকা। সিএসইর লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে এপেক্স ফুটওয়্যার, অগ্নি সিস্টেমস, লাভেলো আইসক্রিম, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ফাইন ফুড, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রবি অজিয়াটা ও বিএসআরএম স্টিলস। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৩০এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 weeks আগে