অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দুই দিনের সূচকের উন্নতিতে মূল্যস্তরের যে ধনাত্মক পরিবর্তন ঘটেছিল, তা থেকে মুনাফা তুলে নিতে গিয়ে ফের বিক্রয়চাপে পড়েছে শেয়ার বাজার। অবনতি ঘটেছে সূচক ও লেনদেনের। সূচকের উন্নতি দিয়ে ৬ মে পুঁজি বাজারগুলো দিন শুরু করলেও দিনের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে বাজারগুলো। এতে ঢাকা শেয়ার বাজারে সবগুলো সূচক অবনতির শিকার হয়। তবে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে সূচকের আচরণ ছিল মিশ্র। এখানে একটি সূচকের অবনতি ঘটলেও অন্য দু’টি সূচকের কমবেশি উন্নতি ঘটে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ মে ১২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। চার হাজার ৯৬৪ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পৌঁছে যায় চার হাজার ৯৯১ পয়েন্টে। লেনদেনের এ পর্যায়ে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হলে বৃদ্ধি পাওয়া সূচক ফের কমতে শুরু করে। দিনশেষে চার হাজার ৯৫১ দশমিক ৭২ পয়েন্টে স্থির হয় সূচকটি। ডিএসইর অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ১০ দশমিক ২৭ ও ৯ দশমিক ০৩ পয়েন্ট।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৬ মে ৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট হ্রাস পায়। একই সময় বাজারটির অপর দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭৫ ও ১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।
৬ মে পুঁজি বাজারের বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আবার ব্যাংকিং খাতের দিকে ফিরতে শুরু করেছে। ৬ মে’র বাজার পর্যালোচনায় বিষয়টি দেখা যায়। সাধারণত বাজারে লেনদেনের উন্নতি ঘটলে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যায়। ৬ মে উভয় বাজারে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। দুই বাজারেরই লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানিতে ব্যাংকিং খাতের প্রাধান্য দেখা যায়।
৬ মে ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল বিচ হ্যাচারি। ৫০ কোটি ২২ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৯০ লাখ আট হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ৬ মে। ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকায় এক কোটি চার লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে মিড ল্যান্ড ব্যাংক দ্বিতীয় অবস্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে ব্র্যাক ব্যাংক, দ্যা সিটি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংিলাদেশ শিপিং করপোরেশন, উত্তরা ব্যাংক, কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ ও ইন্ট্রাকো সিএনজি রি-ফুয়োিলং স্টেশন।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, লাভেলো আইসক্রিম, এনআরবি ব্যাংক, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, মোবিল যমুনা বাংলাদেশ লি., বারাকা পাওয়ার, ওরিয়ন ইনফিউশন, এ বি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, উত্তরা ব্যাংক ও রবি অজিয়াটা।
এ দিকে পুঁজি বাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ার অধিগ্রহণ, সীমান্ত ব্যাংকের সাথে ঋণ চুক্তির বিপরীতে রতি জামানত এবং এ-সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। কমিটির সদস্যরা হলেনÑ বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আল মাসুম মৃধা, সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও নাভিদ হাসান খান।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কিভাবে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিমের অতিরিক্ত এক কোটি ১৫ লাখ সাধারণ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে এবং এ েেত্র শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব কিভাবে করা হয়েছিল সেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। তা ছাড়া তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের অতিরিক্ত শেয়ার অধিগ্রহণের বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ২৪-এর আইন অনুসারে কোম্পানির সেই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনে নিজেদের মধ্যে লেনদেনের কোনো তথ্য যথাযথভাবে প্রকাশ করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত ব্যাংকের পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ধারা ২০-এর অধীনে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম এবং সংশ্লিষ্ট স্টক ব্রোকারেজ হাউস লাভেলো আইসক্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. একরামুল হকের ৫০ লাখ শেয়ার সীমান্ত ব্যাংকের ঋণের চুক্তির বিপরীতে জামানত রাখা হয়। এই ঋণের চুক্তির বিপরীতে জামানতের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
কোম্পানিটি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ।
২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীতি আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জন্য তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৩ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.২৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৭ টাকা। এ ছাড়া চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪০.০৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৩৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৮.৫৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দর ছিল যথাক্রমে ১০৮ টাকা ও ৬৮ টাকা। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত
সর্বশেষ হালনাগাদ 7 days আগে