অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে এবং বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১ মিনিটে নতুন এ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে দেশটিতে রফতানিযোগ্য বাংলাদেশি পণ্যে আগের তুলনায় বাড়তি শুল্ক দিতে হবে, যা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।
এতদিন যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের জন্য মোটামুটি একই হারে শুল্ক আদায় করত। সাধারণত সুতির টি-শার্টের মতো পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার ছিল ১৬.৫ শতাংশ। এখন তার সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য যোগ হচ্ছে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। ফলে একে বলা হচ্ছে ‘ডিফারেনশিয়াল ট্যারিফ স্ট্রাকচার’—যেখানে দেশভেদে আলাদা হারে শুল্ক দিতে হবে। এ পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা নতুনভাবে পর্যালোচনার দাবি রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন এবং ট্যারিফ শিডিউলের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত বছর প্রতি সুতির টি-শার্ট রফতানি করেছে গড়ে ১ ডলার ৬২ সেন্টে (প্রায় ১৯৯ টাকা)। এতদিন এই টি-শার্টে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক ছিল ২৭ সেন্ট (৩৩ টাকা)। এখন নতুন করে ২০ শতাংশ হারে যুক্ত হচ্ছে আরও ৩২ সেন্ট (৩৯ টাকা)। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে একটি টি-শার্ট আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের গড় শুল্ক দিতে হবে ৫৯ সেন্ট বা প্রায় ৭২ টাকা।
তবে এ বাড়তি শুল্ক সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো অনেক প্রতিযোগী দেশের তুলনায় তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের একটি টি-শার্টের ওপর আগে থেকেই ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, আর নতুন করে আরও ২৫ শতাংশ যোগ করায় এখন মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর ফলে ভারতের রফতানি করা একটি টি-শার্টে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের গড়ে ১ ডলার ২৫ সেন্ট পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে, যা বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি।
অন্যদিকে ভিয়েতনামের একটি টি-শার্টে গড় শুল্ক দাঁড়াবে ৯৮ সেন্ট, ইন্দোনেশিয়ার ৯০ সেন্ট, কম্বোডিয়ার ৮৯ সেন্ট এবং পাকিস্তানের ৫২ সেন্ট। চীনের ক্ষেত্রে টি-শার্ট রফতানিতে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার ফলে একটি চীনা টি-শার্টে গড় শুল্ক হবে ৮২ সেন্ট। এমনকি একসময় বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা মিয়ানমারকেও এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দিতে হচ্ছে, যার ফলে প্রতিটি টি-শার্টে তাদের দিতে হয় ১ ডলার ৮৮ সেন্ট—যা তাদের কার্যত প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দিয়েছে।
একসময় আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেত ‘আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট’-এর আওতায়। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। এখন তাদের পণ্যের ওপরও পূর্ণ শুল্ক আরোপ হচ্ছে, ফলে তারা প্রতিযোগিতার বড় হুমকি নয়।
বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় একক বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশটিতে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই এসেছে ৭৬০ কোটি ডলার। এতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যে গড় কার্যকর শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ এবং পোশাকের ক্ষেত্রে তা ছিল ১৬.৭৭ শতাংশ। এখন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হয়ে গড় শুল্কহার আরও বাড়বে।
তবে রফতানিকারকেরা বলছেন, নতুন শুল্ক বাড়লেও তুলনামূলক দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো প্রতিযোগিতায় টিকে আছে এবং অনেকক্ষেত্রে এগিয়েও রয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, “নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাস আমাদের প্রতিযোগী নয়। ভিয়েতনামের তুলনায় আমরা আগের অবস্থানে আছি। চীন ও ভারতের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার চেয়ে ১ শতাংশ বেশি শুল্ক হলেও পিছিয়ে নেই। ইথিওপিয়াও এখন আর হুমকি নয়। এক কথায় বলা যায়, ৩৫ শতাংশ নিয়ে আমরা যে শঙ্কায় ছিলাম, তা কেটে গেছে।”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাজার ধরে রাখতে এখন আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে মান, সময়ানুবর্তিতা এবং টেকসই উৎপাদনে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বাণিজ্য আলোচনা জোরদার এবং সম্ভাব্য নতুন বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা আরও জোরালো করা জরুরি। ●
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/৭ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 month আগে