অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার যাত্রা শুরু করেছিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগকারীদের উচ্চ প্রত্যাশার আবহে। বছরের শুরুতে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে বাজার দ্রুত নিম্নমুখী ধারায় চলে যায়। বছরের শেষে এসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯.৯১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৩৮ পয়েন্টে। একই সঙ্গে ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএস৩০ কমেছে ৪.৯২ শতাংশ, যা পৌঁছেছে ১ হাজার ৮১৬ পয়েন্টে। বাজার মূলধন কমে অন্তত ৩৩ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা, যার ফলে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও এ সময়ে লক্ষণীয় হারে হ্রাস পায়। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-এর তথ্য অনুসারে, শেয়ার ব্যালেন্স থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমে গেছে ৮৩ হাজার ৬১৯টি, যা নির্দেশ করে যে বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী হতাশ হয়ে বাজার থেকে সরে গেছেন।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুনর্গঠন করে। নতুন নেতৃত্ব বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ও বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়। এর অংশ হিসেবে বাজারে আলোচিত অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো বিএসইসি-তে ১২টি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যা বর্তমানে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এছাড়া, বাজারের কাঠামোগত সংস্কারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে পাঁচটি মূল প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), মিউচুয়াল ফান্ড ও মার্জিন ঋণ নীতিমালা সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে। এগুলো একটি কার্যকর রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রাথমিক বাজারে কার্যক্রম স্থবিরই ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো কোম্পানি আইপিও, রাইটস অফার বা প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেনি। এমনকি, বেশ কয়েকটি আবেদন নতুন কমিশন প্রত্যাখ্যান করেছে, যার ফলে বাজারে নতুন তহবিলের প্রবাহে স্থবিরতা বিরাজ করে।
বিএসইসি কিছু বিনিয়োগকারী-বান্ধব পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বিও অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকায় নামিয়ে আনা। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের খরচ কমে এসেছে। পাশাপাশি, মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেতিবাচক ইক্যুইটি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কিছুটা সুরাহা হয়।
বাজারে গুণগত উন্নয়ন ও বৈচিত্র্য আনতে বিএসইসি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানি এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়াও বিএসইসি ৩০ কোটি টাকার ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত চালু করেছে, যার আওতায় ইতোমধ্যে ৬০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাজারকে একটি অধিক সুশাসিত ও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
বিএসইসি’র পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম জানান, বর্তমান কমিশন শেয়ার বাজার সংস্কারে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। তদন্ত কমিটির ১২টি ও টাস্ক ফোর্সের ৫টি প্রতিবেদন ইতোমধ্যে কমিশনে জমা পড়েছে এবং অন্যান্য কাঠামোগত সংস্কারও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও পুঁজিবাজারের সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে