অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সূচকের উন্নতি ধরে রেখেই সপ্তাহের লেনদেন শেষ করেছে দেশের পুঁজি বাজার। ১৩ মার্চ দেশের দুই পুঁজি বাজারই সূচকের কমবেশি উন্নতি ধরে রাখে। আর এ নিয়ে টানা চারদিন টানা মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখল বাজারগুলো। বাজারের ইতিবাচক এ আচরণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুনভাবে আশা জাগাচ্ছে।
১৩ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ( ডিএসই) প্রধান সূচকটির ৯ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে। এ বাজারের ডিএসই-৩০ সূচকটি ১ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখলেও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের ১ দশমিক ৩২ পয়েন্ট অবনতি ঘটে। দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। এখানে সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪৫ ও ৫ দশমিক ১৫ পয়েন্ট।
সূচকের উন্নতি ঘটলেও ঢাকা শেয়ার বাজারে ১৩ মার্চ লেনদেন কিছুটা হ্রাস পায়। সপ্তাহের শেষদিন বাজারটি ৪১৪ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৩৮ কোটি টাকা কম। ১২ মার্চ বাজারটির লেনদেন ছিল ৪৫২ কোটি টাকা। তবে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজার লেনদেনে আগের দিনের ৮ কোটি টাকাই ধরে রাখে।
এ দিকে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কোম্পানি ডরিন পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন বোর্ড (বিআরইবি)। ডিএসইর ওয়েবসাইটে ১৩ মার্চ এ তথ্য প্রকাশিত হয়। জানা যায় বিআরইবি ১১ মার্চ এক চিঠির মাধ্যমে কোম্পানিটির নরসিংদী ২২ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের সঙ্গে করা এ চুক্তি বাতিল করে।
এর আগে পিপিএর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও একই বছরের ৯ এপ্রিল ডরিন পাওয়ারের প থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডরিন পাওয়ারের নরসিংদীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে আরো ৫ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ দিতে চুক্তি করে বিআরইবি। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট বেসিস’ শর্তে বিআরইবির সাথে পাঁচ বছরের চুক্তি করে কোম্পানিটি। তবে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সাথে কোম্পানিটির শুল্ক এবং অন্যান্য শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়াধীন থাকায় উৎপাদনে যেতে পারেনি ডরিন পাওয়ারের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
এ দিকে গত বছরের আগস্ট মাসে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে শুরু করে ডরিন পাওয়ার। অক্টোবরের মাঝেই দুটি বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় কোম্পানিটি। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়বে না, এমন আশঙ্কা থেকেই ডরিন পাওয়ার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির যন্ত্রপাতি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডরিন পাওয়ার। এই দুটিসহ তাদের মোট তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। অন্য দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো টাঙ্গাইল ও ফেনী প্লান্ট। প্রতিটির উৎপাদন মতা ২২ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট। তারা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল। এরপর চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয় ডরিন পাওয়ার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুক্তি নবায়নের আশ্বাস পেয়ে অপোয় ছিল তারা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর কোম্পানিটি বুঝতে পেরেছিল যে তাদের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা কম।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয় ডরিন পাওয়ার। ওই বছরই উল্লিখিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়া ডরিন পাওয়ারের আরো তিনটি সহযোগী বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন মতা ২২৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, নবাবগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন, মানিকগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন। ডরিন পাওয়ারের সহযোগী এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সালের পর শেষ হবে।
ডরিন পাওয়ারের মালিকানায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা নুরে আলম সিদ্দিকীর পরিবার। বর্তমানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আর চেয়ারম্যান হলেন তাহজীব আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী আনজাবিন আলম সিদ্দিকী।
২০০৮ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন্স অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে ৫৫ মেগাওয়াট মতাসম্পন্ন নর্দান ও সাউদার্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ডরিন পাওয়ার ২০১৬ সালে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
১২ মার্চের মতো ১৩ মার্চও ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে লভেলো আইসক্রিম। ২০ কোটি ২৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ২৩ লাখ ৩ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় এদিন। ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় ৩ লাখ ২৭ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে দিনের দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে আরো ছিল শাইন পুকুর সিরামিকস, বিচ হ্যাচারিজ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, হাক্কানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, রবি অজিয়াটা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
কয়েক দিনের মতো ১৩ মার্চও দুই পুঁজি বাজারেই বেশ কয়েকটি কোম্পানি মূল্যবৃদ্ধিতে দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায়। ঢাকায় কমপক্ষে চারটি ও চট্টগ্রাম স্টকে ৯টি কোম্পানির ক্ষেত্রে এটা ঘটে। তবে উভয় বাজারেই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসে বেশি কয়েকটি বীমা কোম্পানি। টানা দরপতনে এ খাতটি দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের সাড়া পায়নি।
ঢাকায় ১৩ মার্চ ৩৯৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার বেচাকেনা হয় যার মধ্যে ১৬৩টির দাম বাড়ে, ১৫৪টির কমে এবং ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। অপর দিকে চট্টগ্রামে লেনদেন হওয়া ২২০টি কোম্পানির মধ্যে ৯৩টির দাম বৃদ্ধি পায়। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/১৪ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 month আগে