অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজারে সূচকের পতন থামছে না। সূচকের বড় উন্নতিতে দিন শুরু করলেও বরাবরের মতো ২৩ এপ্রিলও দিনশেষে পতন ঘটল বাজার সূচকের। এ সময় উভয় পুঁজি বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলো দুই-তৃতীয়াংশই দরপতনের শিকার হয়। ভালো কোম্পানির শেয়ারে আইসিবির বিনিয়োগসীমা তুলে দেয়া, বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে শীর্ষ ব্রোকারদের সাথে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কয়েক দফা বৈঠকও এ পতন থামাতে পারছে না। এভাবে টানা আট দিন সূচকের পতন ঘটল পুঁজি বাজারে।
এ দিকে সূচকের টানা অবনতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন ুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে ২৩ এপ্রিল বেলা আড়াইটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নজরুল, মিজানুর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করে বক্তব্য দেন।
এর আগে ২২ এপ্রিল সংগঠনটি পুঁজি বাজারের সদস্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে পাঠানো বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এক চিঠিতে সংগঠনটির সাথে সংহতি প্রকাশের অনুরোধ জানান। সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন স্বারিত চিঠিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, পুঁজি বাজারে প্রতিদিন যেভাবে রক্তরণ হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে পুঁজি বাজার নামে যে সেক্টরটি রয়েছে, তা মাটির সাথে মিশে যাবে। এখানে সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন, তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। এমনকি পুঁজি বাজারের সাথে যারা বেশি জড়িত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আবার কতগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। চাকরি হারাচ্ছেন অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তা। চাকরি থেকে তাদেরকে ছাঁটাই করা কোনো সমাধান নয়। আপনারা যদি সোচ্চার হন, তাহলেই কেবল এই পুঁজি বাজারের উন্নতি সম্ভব। তাই, অবিলম্বে বিনিয়োগকারী, প্রতিষ্ঠান ও নিজের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ২৩ এপ্রিল বেলা ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মানববন্ধন ও বিােভ কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন। ওই মানববন্ধন ও বিােভ কর্মসূচিতে আপনাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা এবং কর্মচারী প্রেরণ করে আমাদের বিােভ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
অপর দিকে, সংগঠনটির নেয়া এই কর্মসূচির পক্ষে সংহতি জানানোর আহ্বানে কান না দিয়ে ব্রোকার হাউজগুলোকে পুঁজি বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানানো হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে। গতকাল ডিবিএর সেক্রেটারি মো. দিদারুল গনি স্বারিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিবিএর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিবিএর পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে সব সম্মানিত সদস্যদের বিনীত অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, পুঁজি বাজার ও বিনিয়োগকারীর বৃহত্তর স্বার্থে বাজারের শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগের পরিবেশ বিনষ্টকারী সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থেকে সবাইকে পেশাদারিত্বের সাথে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩ এপ্রিল ৪ দশমিক ০৯ পয়েন্ট অবনতি ঘটে। পাঁচ হাজার ২৬ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌঁছে যায় পাঁচ হাজার ৬০ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে ডিএসই সূচকটির উন্নতি ঘটে ৩৪ পয়েন্টের বেশি। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রয়চাপ বৃদ্ধি পেলে সূচকের অবনতি ঘটতে থাকে। দিনশেষে সূচকটির ৪ দশমিক ০৯ পয়েন্ট অবনতিতে লেনদেন শেষ করে পুঁজি বাজারটি। এ সময় ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ ৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখলেও ০ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট হারায় ডিএসই শরিয়াহ সূচক।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ২৩ এপ্রিল ৫৪ দশমিক ০২ পয়েন্ট হারায়। বাজার অন্য দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ০২ ও ৩৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি ২৩ এপ্রিল লেনদেনেরও অবনতি ঘটে দুই পুঁজি বাজারে। ঢাকা শেয়ার বাজার এ দিন ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৪০ কোটি টাকা কম। মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৩৪০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে ছয় কোটি টাকা থেকে চার কোটিতে নেমে আসে লেনদেন।
২৩ এপ্রিল ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষস্থানটি ছিল শাহজিবাজার পাওয়ারের দখলে। ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকায় বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি এ কোম্পানিটির ৩০ লাখ ১৯ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ২৩ এপ্রিল। ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকায় ১২ লাখ ৮৪ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ছিল লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে। বাজারটির লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে মিডল্যান্ড ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিকস, আডিলফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্র্যাক ব্যাংক, ফাইন ফুড, উত্তরা ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।
ডিএসইতে লেনদেনের পাশাপাশি দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানিও ছিল শাহজিবাজার পাওয়ার। বুধবার ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পায় কোম্পানিটির। ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে একই খাতের কোম্পানি ডরিন পাওয়ার ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল যথাক্রমে রানার অটোমোবাইলস, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস, আইপিডিসি ফিন্যান্স, আমান ফিড, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস ও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি।
ডিএসইতে দরপতনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল বিচ হ্যাচারিজ। ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া এডিএন টেলিকম ৮ দশমিক ৬১ ও হাইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ দর হারায়। দরপতনের শীর্ষ তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে খুলনা পেপার অ্যন্ড প্রিন্টিং, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ক্যাবলস, বিআইএফসি ফিন্যান্স, শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/২৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে