অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের পুঁজি বাজারগুলোতে সূচক পতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ২১ এপ্রিল দেশের দুই পুঁজি বাজারের পতন গড়িয়েছে টানা সপ্তম দিনে। ১০ জুলাই থেকে শুরু হয় এ পতন। এর আগেও বাজারগুলো মন্দা আচরণের শিকার হয়েছে কিন্তু এভাবে সূচকের টানা পতন ঘটেনি। ২১ এপ্রিল দিনশেষে ঢাকা শেয়ার বাজারের সবগুলো সূচকেরই অবনতি ঘটে। পক্ষান্তরে, চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে ছিল সূচকের মিশ্র আচরণ। এখানে দু’টি সূচকের পতন ঘটলেও একটি সূচক কিছুটা উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১ এপ্রিল ২৯ দশমিক ৫২ পয়েন্ট অবনতি ঘটে। ২১ এপ্রিল ৫ হাজার ৭৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচক দিনশেষে স্থির হয় ৫ হাজার ৪৪ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে। বাজারটির অপর সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৪ ও ৮ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট। অপর দিকে, দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৬২ দশমিক ৬৮ ও ৩৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। তবে এখানে সিএসই-৩০ সূচকটির ২৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে।
এ দিকে পুঁজি বাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) থেকে আয়, আর্থিক বিবরণী এবং সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑ সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রুমান হোসেন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিনিয়র ম্যানেজার স্নেহাশিষ চক্রবর্তী।
তথ্য মতে, তদন্তে কোম্পানিটি কীভাবে আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল ব্যবহার করেছে, তা যাচাই করা হবে। তদন্ত কমিটি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত মূলধন, স্থায়ী সম্পদ এবং আর্থিক বিবরণীও বিশ্লেষণ করবে। এ ছাড়া, কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবসায়িক অবস্থা ও চলমান কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হবে এবং বিভিন্ন আর্থিক বছরে ঘোষিত ডিভিডেন্ডের বিষয়েও খতিয়ে দেখা হবে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে কোম্পানিটি ১৯৫৪ সালে বরিশালে ইন্দো-পাক ফার্মাসিউটিক্যাল নামে যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতার পর কোম্পানিটি সরকার জাতীয়করণ করে। পরবর্তীতে বেসরকারি কমিশনের মাধ্যমে ২০১৪ সালে এটি বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে প্রথমে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও পরে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়ে ২০১৮ সালে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে।
কোম্পানিটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যে আরো জানা যায়, কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১১৬ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজারের কিছু বেশি। মোট শেয়ারের মধ্যে ৩১ মার্চ ২০২৫ তারিখের হিসাবে ২৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার স্পন্সরদের হাতে, ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে এবং ৫৭ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। অথচ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার স্পন্সরদের হাতে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২১ এপ্রিল সূচকের অবনতি সত্ত্বেও ঢাকা শেয়ার বাজারের লেনদেনে কিছুটা উন্নতি ঘটে। এ দিন ৩৫৯ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে ডিএসই। আগের দিন বাজারটির লেনদেন ছিল ৩৫১ কোটি টাকা। তবে লেনদেন কমেছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে। এখানে ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় নেমে আসে লেনদেন।
ডিএসইতে ২১ এপ্রিল লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে নেয় বিচ হ্যাচারি। ২৩ কোটি ৪২ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ২৮ লাখ ৩৯ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ২১ এপ্রিল। ১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকায় ১৬৫ লাখ ৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনে শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল যথাক্রমে মিডল্যান্ড ব্যাংক, শাইন পুকুর সিরামিকস, উত্তরা ব্যাংক, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, ফাইন ফুড ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি.।
মূল্যবৃদ্ধিতে দিনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল শাহজিবাজার পাওয়ার। ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ দাম বাড়ে বিদ্যুৎ খাতের এ বেসরকারি কোম্পানির। এ ছাড়া হাইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস ৮ দশমিক ১৪ ও ডরিন পাওয়ারের ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইর শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল যথাক্রমে কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ, ইফাদ আটোস, রানার অটোমোবাইলস, এসইএম লেকচার ফান্ড, শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ, সেনা ইন্স্যুরেন্স পিএলসি ও ডেসকো।
অপর দিকে দরপতনে ডিএসইর শীর্ষ কোম্পানি ছিল বিচ হ্যাচারি। ২১ এপ্রিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৯ দশমিক ২২ ও বিডি ফিন্যান্স ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ দর হারায়। দরপতনে ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে আমরা নেটওয়ার্ক, উত্তরা ব্যাংক, আমরাটেক, খুলনা পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং, এস আলম স্টিলস, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও আইসিবি সোনালি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২২ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে