অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেছেন, পুঁজি বাজার স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা নয়। পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাদের প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে যে, এটি এক দিনের বিনিয়োগের ক্ষেত্র নয়।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে, আপনি যাকে পুঁজি দিয়েছেন তিনি দীর্ঘমেয়াদের জন্য পুঁজি নিয়েছেন। তাকেও মুনাফা করতে সময় দিতে হবে, আপনারও মুনাফা গ্রহণের সময় আসতে হবে। তাহলেই আপনি লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)-এ ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে পুঁজি বাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ১৯ এপ্রিল ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে ফারজানা লালারুখ বলেন, বাজারের মন্দার কারণে অনেকসময় লোকসানের শিকার হতে হয়। তখন যদি কেউ মনে করেন, বাজার খারাপ, এ অবস্থায় লোকসান দিয়ে আমি মার্কেট থেকে চলে যাই। এই ধরনের সিদ্ধান্ত যেমন নেয়া যাবে না, তেমনি পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করে খুব তাড়াতাড়ি বড়লোক হয়ে যাবো সেটিও কিন্তু চিন্তা করা যাবে না। মনে রাখতে হবে পুঁজি বাজার বড়লোক হওয়ার জায়গা না। একটি শেয়ার কিনে মূলত আপনি একটি কোম্পানির মালিকানার অংশ হলেন। সুতরাং আপনাকে ওই কোম্পানিটি ধারণ করতে হবে। লাভ-লোকসান দুটোই মেনে নিতে হবে। পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুজবে কান না দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের নারী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা ক্রমবিকাশ কমিটির আহ্বায়ক ও সহকারী অধ্যাপক কাশফীয়া শারমিন।
ইনস্টিটিউটের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুছ সালেহীন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ও প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন। সেমিনার সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক এবং নারী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা ও ক্রমবিকাশ কমিটির সদস্য ফাইমা আক্তার।
টানা পঞ্চম দিনেও পতন- এ দিকে ২০ এপ্রিল টানা পঞ্চম দিনের মতো পতনের মধ্য দিয়ে পার করে দেশের পুঁজি বাজার দু’টি। দিনের শুরুতে স্বল্প সময়ের জন্য বাজার আচরণে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যে দুই বাজারেই বিক্রয়চাপ তৈরি হয়। লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত এ চাপ অব্যাহত থাকলে সূচকের পতন দিয়েই দিন শেষ হয় দুই পুঁজি বাজারের।
প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০ এপ্রিল ২২ দশমিক ২২ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৫ হাজার ৯৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি ২০ এপ্রিল দিনশেষে ৫ হাজার ৭৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে স্থির হয়। এ সময় ডিএসই’র অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ২ দশমিক ৮৮ ও ৮ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।
অপর দিকে দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৬১ দশমিক ০২ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। এ বাজারে অন্য দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৪৪ ও ২৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতি ঘটলেও ২০ এপ্রিল দুই বাজারেই লেনদেনের কিছুটা উন্নতি ঘটে। এ দিন ঢাকা শেয়ার বাজার ৩৫১ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ১২ কোটি টাকা বেশি। ১৭ এপ্রিল ডিএসই’র লেনদেন ছিল ৩৩৯ কোটি টাকা। লেনদেন বেড়েছে চট্টগ্রাম বাজারেও। এখানে চার কোটি ৮৩ লাখ টাকা থেকে ছয় কোটি ৩৫ লাখ টাকায় পৌঁছে লেনদেন।
দুই বাজারের লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ব্যাংক ও বীমা খাতের দিকে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ঝোঁক বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগকারীরা এ দু’টি খাতে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। এ দিন ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। ১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ২০ এপ্রিল। ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ১১ লাখ ২৯ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে বিচ হ্যাচারি উঠে আসে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
ডিএসই’র লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে মিডল্যান্ড ব্যাংক, শাইন পুকুর সিরামিকস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, এপেক্স ফুটওয়্যার, ওরিয়ন ইনফিউশন। অন্য দিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে লেনদেনে শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় ছিল ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুড, লাভেলো আইসক্রিম, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, রবি অজিয়াটা, বেক্সিমকো লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মীর আখতার ও শাইন পুকুর সিরামিকস।
ডিএসইতে দিনের লেনদেনে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে এস আলম কোল্ড রোল স্টিলস। কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশ। লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই দিনের মূল্যবৃদ্ধির সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যায় কোম্পানির শেয়ারদর। একই অবস্থা দেখা যায় সাধারণ বীমা কোম্পানি সেনা ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে দিনের মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখে এটি। মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে মিডল্যান্ড ব্যাংক, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, এপেক্স ফুটওয়্যার, রিলায়েন্স ওয়ান ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স ও শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ।
অপর দিকে ডিএসইতে দরপতনের শীর্ষে ছিল বিচ হ্যাচারি। কোম্পানিটি ২০ এপ্রিল ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ দর হারায়। ১৭ এপ্রিল ৯৬ দশমিক ৭০ টাকা দরে থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর ২০ এপ্রিল নেমে আসে ৮৮ টাকায়। ৮ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল বিডি ফিন্যান্স। দরপতনে শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে আরো ছিল যথাক্রমে ফারইস্ট ফিন্যান্স, মাগুরাপ্লেক্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, হাইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, উসমানিয়া গ্লাস শিট ও ইসলামী ফিন্যান্স। ●
অকা/পুঁবা/ফর/দুপুর/২১ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে