অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজারে শারদীয় দুর্গাপূজার সরকারি ছুটি পূর্ববর্তী শেষ কর্মদিবস ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। আর এই দিনে সূচক ও লেনদেনের উন্নতি ঘটেছে পুঁজি বাজারে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর বাজারগুলোর ইতিবাচক আচরণের পেছনে ছিল ব্যাংকিং খাতের দুর্বল কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধি। টানা দু’দিন তালিকাভুক্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। গতকাল দুই পুঁজিবাজারেই মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর প্রথমেই ছিল এসব ব্যাংকের অবস্থান।

৩০ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শুরুতেই দুই পুঁজি বাজার সূচক ছিল বেশ ঊর্ধ্বমুখী। এ সময় লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই চলে আসে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায়। কিন্তু লেনদেনের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্যান্য খাত কিছুটা বিক্রয়চাপের শিকার হলেও ব্যতিক্রম ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ দু’টি খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিশেষ করে দুর্বল ভিত্তিরগুলোই ছিল মূলত বিনিয়োগকারীদের টার্গেট। লেনদেন-পরবর্তী বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় এ দুই খাতের সবচেয়ে দুর্বল কোম্পানিগুলোর প্রায় সব ক’টি ৩০ সেপ্টেম্বর দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ অবস্থান ধরে রেখেছে। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর কয়েকটি ব্যাংক দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে এলেও গতকাল প্রায় সবগুলোই এ তালিকায় ছিল। এর বাইরে এ দুই খাতের অন্য কোম্পানিগুলোরও কমবেশি মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায় যা দিনশেষে বাজার সূচকের উন্নতি ধরে রাখতে সহায়ক ছিল।

ব্যাংকিং খাতের মূল্যবৃদ্ধির এ দিনে হোঁচট খেয়েছে গত কিছু দিন ধরে টানা মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে থাকা জি কিউ বলপেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইর সর্বোচ্চ দরপতনের শিকার ছিল এটি। মৌলভিত্তিতে পিছিয়ে থাকার পরও শুধুমাত্র স্বল্পমূলধনকে পুঁজি করে বেশ কিছুদিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েই চলছিল যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক বিরক্তির কারণ ছিল। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা পুঁজি বাজার কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির শেয়ারের অযৌক্তিক এ মূল্যবৃদ্ধিতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিল না। জুলাইয়ে যে কোম্পানির শেয়ারের দর ছিল ১৫০ টাকার আশপাশে সেখানে ২৮ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দর উঠে যায় ৬০০ টাকায়।

সে হিসেবে দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় চার গুণ। অথচ এ সময় ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানির কাছে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চেয়েই কর্তব্য শেষ করেছে। কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ সেপ্টেম্বর ২৬ দশমিক ০১ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। পাঁচ হাজার ৩৮৯ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দিন শেষে পৌঁছে যায় পাঁচ হাজার ৪১৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে। সকালে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সূচকটি দুপুর ১২টার পর পৌঁছে যায় পাঁচ হাজার ৪৩৮ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে ডিএসই সূচকের উন্নতি ঘটে ৪৮ পয়েন্ট। তবে এখান থেকে বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে বাজারটি। এ সময় ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য খাতের কোম্পানিগুলো দর হারায়। দিনের বাকি সময় এ চাপ অব্যাহত থাকলে বৃদ্ধি পাওয়া সূচকটির একটি অংশ হারায়। ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ ২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট অবনতির শিকার হলেও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে ৮ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।

দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৪০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ডিএসইর মতো এখানেও সিএসই -৩০ সূচকটি ২৭ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট হারায়। কিন্তু বিশেষায়িত অপর সূচক সিএসসিএক্স এ সময় ১৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।

সূচকের পাশাপাশি গতকাল উন্নতি ঘটে দুই পুঁজি বাজারের লেনদেনে। ঢাকা শেয়ার বাজার ৬৯৬ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৯৭ কোটি টাকা বেশি। সোমবার ডিএসই্র লেনদেন ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে ১২ কোটি টাকা থেকে ১৬ কোটি টাকায় পৌঁছে লেনদেন।

৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে নেয় সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস। ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় কোম্পানিটির আট লাখ ৭৪ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। ২৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় ৬০ লাখ ২৭ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে সামিট অ্যালাইয়ান্স পোর্ট ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে রুপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, সিভিও পেট্রো সিনথেটিকস, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ডমিনেজ স্টিলস, কে অ্যান্ড কিউ ও ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং।

ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশ। ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটা বিডি ল্যাম্প উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকার অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যাডার্ড ব্যাংক, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রুপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও রহিমা ফুড।

দিনের দরপতনের শীর্ষে ছিল জিকিউ বলপেন। ৭ দশমিক ১০ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। আগের দিন ৬০০ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩০ সেপ্টেম্বর নেমে আসে ৫৫৬ টাকায়। এ ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ দশমিক ৩৯, প্রাইম টেক্সটাইলস ৪ দশমিক ২৮, এপেক্স ফুড ৪ দশমিক ০৯, নুরানি টেক্সটাইলস ৪ দশমিক ০১, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস ৩ দশমিক ৩৩ , তাল্লু স্পিনিং ৩ দশমিক ১৭, ইনফরমেশন সিস্টেমস নেটওয়ার্ক ৩ দশমিক ১৫, জেনেক্স ইনফোসিস ২ দশমিক ৯২ ও ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স ২ দশমিক ৮১ শতাংশ দর হারায়। ●

অকা/পুঁবা/ফর/রাত/১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version