অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের পুঁজি বাজার যেন আবার পেছন দিকেই হাটছে। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন কমছে। বাজারগুলোতে লেনদেন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যেন প্রাণহীন। লেনদেনের গতি নেই বললেই চলে। দুই বাজারেই স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে চার ঘণ্টা ২০ মিনিট। আর বাকি ১০ মিনিট পোস্ট ট্রেডিং সময় নির্ধারিত আছে। এ সময়েও নির্ধারিত দরে শেয়ার বেচাকেনা করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাজারগুলো লেনদেনের গতি হারিয়ে এক প্রকার স্থবিরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা এ ক্ষেত্রে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশাকেই দায়ী করছেন।

পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজি বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার পর প্রথম দিকে স্বাভাবিক আচরণ দেখা গেলেও পরে আবারো পুরনো ধারায় ফিরে যায়। এবার স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করে কারসাজিকারীদের একটি গ্রুপ। দিনের পর দিন স্বল্প মূলধনের নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। এর মধ্যে কোনো কোনোটির দর ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা পুঁজি বাজার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অথচ বাজার নিয়ে একটি গ্রুপের এ কারসাজি শুরুতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ছেদ ঘটায়। ফলে দিন দিন বাজার বিমুখ হয়ে পড়ছেন তারা। আর এতে গতি হারাচ্ছে পুঁজি বাজার।

২৮ সেপ্টেম্বর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেনের বড় ধরনের অবনতির পর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসেও লেনদেনের শুরুতে বিক্রয়চাপে বাজারগুলো ছিল অস্থির। লেনদেনের মাঝামাঝি পর্যায়ে বাজার সূচকের বেশ কিছুটা অবনতি ঘটলেও শেষ পর্যায়ে এসে বিক্রয়চাপ কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় উভয় বাজারই হারানো সূচক ফিরে পায়। দিনশেষে উভয় বাজারেই প্রধান সূচকটি নামমাত্র উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হলেও অবনতির শিকার হয় দুই বাজারের বিশেষায়িত সূচকগুলো। এভাবে মিশ্র সূচকের আচরণ দিয়েই গতকাল লেনদেন শেষ করে দুই পুঁজি বাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯ সেপ্টেম্বর ৯ দশমিক ৭০ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখে। ৫ হাজার ৩৮০ দশমিক ০৭ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি সোমবার দিনশেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৩৮৯ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ১ দশমিক ২৯ ও দশমিক ৯৬ পয়েন্ট।

অনুরূপভাবে দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ২৯ সেপ্টেম্বর ১১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ২৩ দশমিক ৫১ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি লেনদেন শেষে পৌঁছে যায় ১৫ হাজার ৩৫ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। বাজারটির অপর দুই সূচক নিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স এ সময় যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৬৮ ও ২ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট হারায়।

সূচকের মিশ্র আচরণ সত্ত্বেও ২৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে লেনদেন সামান্য বেড়েছে। সোমবার ৫৯৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে বাজারটি যা আগের দিন অপেক্ষা ৩৩ কোটি টাকা বেশি। ২৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৫৬৪ কোটি টাকা। তবে লেনদেন কিছুটা কমেছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে। এখানে ১৩ কোটি টাকা থেকে ১২ কোিিট টাকায় নেমে আসে লেনদেন।

এ দিকে একীভূত করার ঘোষণার পর থেকে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের ধারাবাহিক দরপতন ঘটলে দু’দিন এ ব্যাংকগুলো হারানো দর ফিরে পেতে দেখা গেছে। রোববারের পর ২৯ সেপ্টেম্বরও ডিএসসির মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২৮ সেপ্টেম্বর ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিটির ২৯ সেপ্টেম্বর ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক ও স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকও ২৯ সেপ্টেম্বর এ তালিকায় উঠে আসে। এতে এসব ব্যাংকে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও তাদের বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছেন।

২৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন। ২৫ কোটি ১০ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৪ লাখ ৭৮ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ২৯ সেপ্টেম্বর। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ১ কোটি ৬ লাখ ৫১ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয়ে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিমটেক্স উঠে আসে দিনের লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা দশ কোম্পানির তালিকার অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, ব্রাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কে অ্যান্ড কিউ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ও জেনেক্স ইনফোসিস লি.।

২৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ৯ দমমিক ০৯ শতাংশ দাম বাড়ে কোম্পানিটির। ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল এক্সিম ব্যাংক। মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক, সিমটেক্স, কে অ্যান্ড কিউ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এস আলম কোল্ডরোল স্টিলস, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি এ এম সি এল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ও একমি পেস্টিসাইড লি.।

একই সময় বাজারটির দরপতনের শীর্ষে ছিল ব্যাংক বহির্ভূত আার্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। ২৯ সেপ্টেম্বর ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। দরপতনে ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে তুং হাই টেক্সটাইলস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, জেবিবি পাওয়ার, হামিদ ফেব্রিক্স লি., অ্যাপেক্স স্পিনিং, এ এফ সি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, রিজেন্ট টেক্সটাইলস ও হামি লি.। ●

অকা/পুঁবা/ফর/সন্ধ্যা/৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 3 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version