অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অভূতপূর্ব রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯০ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। এনবিআরের ভাষায়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সর্বোচ্চ রাজস্ব সংগ্রহের রেকর্ড।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি
রাজস্ব প্রবৃদ্ধির এই ধারা গত কয়েক বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭৫ হাজার ৫৫৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৭৬ হাজার ৬৮ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা, এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ৬৮ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। সেই তুলনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আয় প্রবৃদ্ধি রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
তিন প্রধান খাতে নতুন রেকর্ড
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তিনটি প্রধান রাজস্ব উৎস—ভ্যাট, আয়কর ও ভ্রমণকর, এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক—সবখানেই নতুন মাইলফলক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট
এই খাত থেকে এসেছে সর্বাধিক রাজস্ব—৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় এ খাতে আদায় ছিল ২৬ হাজার ৮৩৮ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে আদায় ছিল ২৮ হাজার ৪৪৫ দশমিক ৪১ কোটি টাকা, আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৫৪৬ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা।
আয়কর ও ভ্রমণকর
এই খাতে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের ২৪ হাজার ৮০ দশমিক ৮২ কোটি টাকার তুলনায় ১৮ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের আওতা বৃদ্ধির প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আমদানি ও রফতানি খাত
এই খাত থেকে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আদায় ছিল ২৪ হাজার ৬২৫ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি ও পণ্যের মূল্যস্ফীতির প্রভাব এতে ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এনবিআর জানায়, এই রেকর্ড রাজস্ব আদায় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা, সেবা-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নিয়মিত তদারকির ফল। সংস্থাটি ভবিষ্যতে কর প্রশাসন আরও সম্প্রসারণ, করফাঁকি প্রতিরোধ, এবং ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধারে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই ধারাবাহিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিতে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজেট বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই প্রবৃদ্ধি টেকসই রাখা যায়, তবে বাংলাদেশের রাজস্ব জিডিপি অনুপাতেও ধীরে ধীরে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি দেখা যেতে পারে। ●
অকা/রা/ই/সকাল/১৭ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 16 hours আগে