অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
আজ সোমবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস। প্রতি পাঁচ বছর পর এই দিবসটি উদযাপন করা হয় পরিসংখ্যানের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ, জনকল্যাণ ও টেকসই উন্নয়নে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভূমিকা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে।
এবারের প্রতিপাদ্য— “Driving Change with Quality Statistics and Data for Everyone”, যার বাংলা অর্থ, “সবার জন্য মানসম্পন্ন তথ্যের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা।” এটি বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবসের চতুর্থ আয়োজন। দিবসটি উপলক্ষে দেশে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার সমষ্টি নয়—এটি বাস্তবতা বিশ্লেষণ, সমস্যা শনাক্তকরণ এবং সমাধানের রূপরেখা তৈরির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সরকারের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক উন্নয়ন—সবখানেই পরিসংখ্যান একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ, দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস, নারী-পুরুষের সমতা অর্জন কিংবা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সঠিক উপাত্ত অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
নীতিনির্ধারকদের জন্য মানসম্মত পরিসংখ্যান হলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহায়ক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোথায় কত বিনিয়োগ প্রয়োজন, কোন অঞ্চলে উন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে—এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্ভর করে সঠিক তথ্যের ওপর।
বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিংয়ের যুগে পরিসংখ্যানবিদদের দায়িত্ব বেড়েছে বহুগুণ। শুধু তথ্য সংগ্রহ বা বিশ্লেষণ নয়, এখন তাদের কাজ হচ্ছে বিপুল ডেটার ভেতর থেকে প্রাসঙ্গিক ও নির্ভরযোগ্য উপাত্ত বের করে তা সহজভাবে উপস্থাপন করা।
বাংলাদেশে পরিসংখ্যানের মানোন্নয়নে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি আট সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই কমিটি বিবিএসের তথ্যের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও প্রাপ্যতা যাচাই করে সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের কাছে খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স প্রস্তাব করেছে, ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন সংশোধন করে বিবিএসকে আরও স্বাধীন ও স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তথ্য যাচাই ও প্রকাশে যেন কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব না পড়ে—সে বিষয়ে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “একটি দেশের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান অপরিহার্য। যদি তথ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নীতিনির্ধারণ দুর্বল হয়ে পড়ে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। এতে সরকারের নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া হবে আরও কার্যকর, জনগণের আস্থা বাড়বে এবং বৈশ্বিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি শক্তিশালী হবে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএসের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর সহায়তায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক সেমিনার।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, “এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি পরিমাপের ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে বিবিএসকে আধুনিক ও বিশ্বমানের সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে একাধিক সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রকাশ আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ হবে। মানসম্মত তথ্যের সর্বজনীন প্রাপ্যতা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করবে এবং উন্নয়নকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলবে।” ●
অকা/প্র/ই/সকাল/২০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 13 hours আগে