অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঠিক কত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনায় এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট কবীর আহমেদ খান বলেন, “সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এতে প্রভাবিত হতে পারে।”

একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। তিনি বলেন, “রপ্তানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যার আর্থিক অঙ্ক এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে।”

তিনি জানান, শুধু সরাসরি আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং সময়মতো কাঁচামাল না পাওয়ায় অর্ডার বাতিল হওয়া, জরুরি পণ্য এয়ারপথে পাঠাতে গিয়ে ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি, ডিসকাউন্ট দিতে বাধ্য হওয়া কিংবা বায়ারের স্যাম্পল সময়মতো না পাওয়ার কারণে অর্ডার কনফার্ম করতে না পারা—এই সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিধি আরও বাড়বে।

কার্গো ভিলেজের গুদামগুলোতে তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যাল, কৃষি ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের বিভিন্ন কাঁচামাল মজুত থাকে।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, “তৈরি পোশাক খাতের পাঁচ শতাধিক রপ্তানিকারকের ছোট ছোট মালামাল সেখানে ছিল। টাকার হিসেবে ক্ষুদ্র মনে হলেও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কোটি কোটি ডলারের রপ্তানি।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ধরা যাক, আমার দুই হাজার ডলারের কাঁচামাল পুড়ে গেছে—দেখতে ছোট অঙ্ক হলেও এর কারণে প্রায় দুই লাখ ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আবার নতুন করে এয়ারে আনতে গেলে ব্যয় হবে পণ্যের অর্ধেক মূল্যের সমান। এই ব্যয় ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য মারাত্মক। অনেকে হয়তো আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় বায়ার একটি স্যাম্পল একসঙ্গে বাংলাদেশ, চীন ও ভিয়েতনামে পাঠায়। আমরা যদি সময়মতো সেই স্যাম্পল না পাই, তাহলে কাউন্টার স্যাম্পল পাঠাতে পারবো না। ফলে বায়ার চীনের রপ্তানিকারককেই অর্ডার দিয়ে দেয়।”

বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরীও একই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এই অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও শিগগিরই প্রকট হয়ে উঠবে।”

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, এয়ার কার্গোতে থাকা পণ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের। বর্তমানে ৬০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার কোম্পানি বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, “আমরা সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি, তাদের কী পরিমাণ মালামাল কার্গো ভিলেজে ছিল তা জানাতে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব পেতে কিছুটা সময় লাগবে।”

তিনি নিজেও ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন, কারণ তাঁর আমদানিকৃত অ্যাক্সেসরিজ ও মেশিনারিজ ওই কার্গোতে ছিল কিনা, তা শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি।

জেমটেক্স লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদ জানান, “ভারত থেকে আমদানি করা প্রায় ৪০ কেজি লেইচ (অ্যাক্সেসরিজ) কার্গো ভিলেজে ছিল। আমার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানিয়েছেন, পণ্য পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ। এগুলো কুরিয়ার সেকশনে ছিল, আর প্রথমেই আগুন লাগে সেই অংশে।”

তিনি বলেন, “এই অ্যাক্সেসরিজগুলো দ্রুত প্রয়োজন ছিল বলে এয়ারে এনেছিলাম। এগুলোর মাধ্যমে ১.৬২ লাখ ডলারের রফতানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কারণ ৩০ সেপ্টেম্বরেই রপ্তানির সময়সীমা পেরিয়ে গেছে।”

গত অর্থবছরে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

কার্গো ভিলেজ সাধারণত হালকা যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক পণ্য, তৈরি পোশাক, নমুনা, অ্যাক্সেসরিজ, পারসেল ও দলিলপত্রের আমদানি-রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিও গণমাধ্যমকে জানান, তাদের ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের কেমিক্যাল পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার ছাড় করানোর চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। রোববার ছাড়ের কথা ছিল—কিন্তু তার আগেই সব পুড়ে গেছে।” ●
অকা/প্র/ই/সকাল/১৯ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 7 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version