অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক ও পূর্বাভাস প্রতিবেদন-এ বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে ‘সতর্ক আশাবাদী’ মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে এবং ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধিও পুনরুদ্ধার হয়েছে—যা সরকারের নীতিগত সংস্কার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক পদক্ষেপের ইতিবাচক ফলাফল।
প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদহার হ্রাস, ই-মনি ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণ, এবং সরকারি অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে বিতরণের মতো উদ্যোগগুলো আমানত বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। শক্তিশালী প্রবাসী আয়ও এই প্রবণতাকে আরও মজবুত করেছে। প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কিছুটা পুনরুদ্ধার করবে।
সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগস্টে ছিল ৮.২৯ শতাংশ। খাদ্য ও অখাদ্য—উভয় খাতেই সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৫৬ শতাংশের কাছাকাছি স্থির রয়েছে। প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়াই দীর্ঘমেয়াদি মূল্যচাপের মূল কারণ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে চালের দামই প্রধান চালিকাশক্তি হলেও এর অবদান আগস্টের ৪৮.৩৭ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। আলু ও পেঁয়াজের দামের পতনে সাধারণ ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে মোটা, মাঝারি ও সরু সব ধরনের চালের দাম প্রায় ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকেও অর্থনীতি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্চে যেখানে রিজার্ভ ছিল ২৫.৫ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৪ বিলিয়ন ডলারে। বিএমপি ৬ মানদণ্ডে এই সময়ে রিজার্ভ ২০.৪ বিলিয়ন থেকে উন্নীত হয়ে ২৬.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
তবে রফতানি খাতে সেপ্টেম্বর মাসে সামান্য মন্দা দেখা দিয়েছে। পরপর কয়েক মাস ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় বজায় থাকলেও সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলারে—আগস্টে যা ছিল ৩.৯২ বিলিয়ন ও জুলাইয়ে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। মৌসুমি প্রভাব এবং তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি হ্রাসই এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে পাটজাত, চামড়া এবং হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি ছিল, যা খাতটির স্থিতিস্থাপকতার প্রমাণ।
২০২৫ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বরে টাকার বিনিময় হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থেকেছে—প্রতি মার্কিন ডলারে ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। একই সময়ে রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (REER) সামান্য বেড়ে ১২১.২ থেকে ১২৭.২-এ উন্নীত হয়েছে, যা উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় অগ্রগতির ইঙ্গিত বহন করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত বছরে ১০.০১ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং ব্রড মানি (M2) ৭.৭৮ শতাংশে সম্প্রসারিত হয়েছে। রাজস্ব প্রবাহও গতি পেয়েছে—২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় বেড়েছে ৩৩.৮ শতাংশ, আয়কর ২৪ শতাংশ; তবে শুল্ক রাজস্ব ৪.৫ শতাংশ কমেছে। ●
অকা/প্র/ই/সকাল/২২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 14 hours আগে