অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর চেয়ারম্যান ড. এম. আসলাম আলম বলেছেন, আস্থা সংকটের কারণে দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) বীমা খাতের অবদান অর্থাৎ পেনিট্রেশন বাড়ছে না। তিনি ২ জুলাই রাজধানীর দিলকুশাস্থ আইডিআরএ’র কার্যালয়ে দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে এমন মন্তব্য করেন।
জনাকীর্ন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই তিনি বলেন, মহান জুলাই বিপ্লবের ফসল বর্তমান এ কর্তৃপক্ষ। তিনি ও তার ৪ সদস্যের স্বপদে যোগদানের ৭ মাসের আইডিআরএ’র সংস্কার ও উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরেন।
সংস্কার ও কার্যক্রমের চিত্র বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের বীমা খাত সংকটের মধ্যে আছে। ১৩ লাখ বীমা গ্রাহক কোম্পানিগুলোর কাছে দাবি বাবদ ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা পাবে। অপরিশোধিত এ অঙ্কের মধ্যে ৪৫ শতাংশ লাইফ এবং ৪৬ শতাংশ নন লাইফ বীমার। বর্তমানে ১৫টি লাইফ এবং ১৭টি নন লাইফ কোম্পানি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বীমা গ্রাহকের আস্থা দ্রুত হ্রাসমান বিষয়টি উল্লেখ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর চেয়ারম্যান বলেন, ১৪ বছরে ৫৪ লাখ বীমা পলিসি হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে আমরা দেশের বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ২৪ হাজার ৮৫২টি অভিযোগ পেয়েছি। কর্তৃপক্ষের বর্তমান স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে অভিযোগগুলোর দ্রুত সমাধান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে বীমা খাতে যেখানে ০.৯৪ শতাংশ পেনিট্রেশন ছিল; ২০২৩ সালে তা ০.৪১ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, ২০২৪ সালে তা আরো কমেছে। তিনি বলেন, এ সময়ে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে কিন্তু পেনিট্রেশন কমে যাচ্ছে। আস্থার যে সংকট যে তৈরি হয়েছে তা উত্তরণের পথ হিসেবে প্রস্তাবনা আকারে আমরা কিছু সংস্কারের রূপরেখা দাঁড় করেছি। যদিও তা চূড়ান্ত নয়। সকল অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা ক্রমান্বয়ে তা চূড়ান্ত করব। এরমধ্যে বীমা ও রেজুলেশন আইন নতুন ও সংশোধন করার প্রস্তাব করেছি আমরা।
ড. এম. আসলাম আলম ও সদস্যগণ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সংকটে আক্রান্ত কোম্পানিতে বিদ্যমান আইনে প্রশাসক নিয়োগ করা যাবে না। সে জন্য আমরা আইনের সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছি। মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয় কোম্পানির পর্ষদ। আমরা তা যাচাই বাছাই করতে পারি মাত্র। তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর বিরুদ্ধে বর্তমানে ১২৪টি মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, বীমা খাতে আস্থার সংকট সমাধানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন বৃদ্ধি করতে হবে।
যাত্রী পরিবহনে ‘সকল যাত্রী বীমাকৃত’ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি দেখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে এটা ঐচ্ছিক বিষয়, বাধ্যতামূলক নয়। আমিও মনে করি বাধ্যতামূলকভাবে সকল পরিবহন যাত্রীকে বীমার আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে সদস্য (নন লাইফ) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘সকল যাত্রী বীমাকৃত’ স্লোগান এখন আর দেখা যায় না। কোম্পানিগুলোও এ বিষয়ে আগ্রহী নয়। আমরা মৃত যাত্রীর মনোনীতককে বিদ্যমান ২০ হাজার টাকা দাবির স্থলে তা বাড়িয়ে ২ লাখ টাকার প্রস্তাব করেছি।
৮২টি বীমা কোম্পানির উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমান কমসংখ্যক জনবল প্রশ্নের জবাবে সদস্য (প্রশাসন) মোঃ ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংখ্যার মতো জনবল এখানে না হলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বর্তমান ১৬০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি খুবই অপ্রতুল। এ সংখ্যার মধ্যে নিয়মিত কাজ করেন প্রায় ১০০ জন। আমরা আইডিআরএ ৫৩৫ জন জনবলের প্রস্তাব রেখেছি।
সংবাদ সম্মেলনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর সদস্য (আইন) তানজিনা ইসমাইল, সদস্য (লাইফ) মো. আপেল মাহমুদ, পরামর্শক (মিডিয়া ও যোগাযোগ) সাইফুন্নাহার সুমি, পরামর্শক এবং নির্বাহী পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন। ●
অকা/বীখা/প্র/ বিকেল/২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে