অর্থজাগজ প্রতিবেদন ●
টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কর্মকাণ্ডে আস্তে আস্তে গতি আসতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে বন্দরে কনটেইনার জাহাজের সারি জমেছে। একেকটি জাহাজ বার্থি পেতে (জেটিতে ভিড়তে) সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে।
ইয়ার্ডে জমেছে ৪৪ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট একক) আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার। যা বন্দর ইয়ার্ডের মোট ধারণক্ষমতার প্রায় ৮৩ শতাংশ। ১৯টি কনটেইনার জাহাজ জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ২০ জুন পর্যন্ত বন্দরে পৌঁছার সিডিউল রয়েছে আরো ১৯টি কনটেইনার জাহাজের। ফলে বন্দরের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
একদিকে মে মাসের শেষের দিকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের টানা কর্মবিরতি, এর ওপর ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির গেটওয়ে খ্যাত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ভায়াবহ জাহাজ জটের কবলে পড়ে। পাশাপাশি বাড়ছে কনটেইনার ও বাল্ক পণ্যের স্তূপ। এরই মধ্যে বন্দরের জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় আছে ১৯টি কনটেইনার জাহাজ। জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় থাকা এসব জাহাজে ২০ হাজার টিইইউএস’র অধিক কনটেইনার রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়ে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকালও বেড়েছে। বর্তমানে জেটিতে নোঙররত কনটেইনার জাহাজগুলোর সিংহভাগই ৬ ও ৭ জুন বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছেছিল বলেও সূত্র জানায়।
ঈদের পর টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটির ফলে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। বন্দর ও কাস্টমস ঈদের দিন ব্যতীত খোলা থাকলেও শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় কাক্সিত ডেলিভারি না হওয়ায় কার্যত বন্ধই ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞ। সংশ্লিষ্টদের মতে, এত লম্বা ছুটির ফাঁদে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর পড়েনি। বন্দরের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সরাসরি সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানাগুলোতেও শুরু হয় দীর্ঘ ছুটি। ফলে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম অনেকটাই নামমাত্র চালু ছিল।
ডেলিভারি বন্ধ থাকলেও বন্দরে আসা জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস বন্ধ ছিল না। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বন্দর সূত্র জানিয়েছে, দৈনিক গড়ে সাড়ে তিন হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সাইজের প্রতি ইউনিট কনটেইনার হিসেবে) আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার জাহাজ হতে বন্দর ইয়ার্ডে নামে।
চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব অনুযায়ী ১৬ জুন ৪৪ হাজার ৪৫ টিইইউএস কনটেইনার ইয়ার্ডে পড়েছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। কিন্তু ইয়ার্ডের যে ধারণক্ষমতা হিসাব করা হয় তা মূলত সিক্স হাই (এক ভাজে উপরের দিকে ছয়টি) হিসেবে। ফলে একদিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত কনটেইনার ইয়ার্ডে অবস্থান করছে, অন্যদিকে কার্যত বন্দরের ইয়ার্ডে এখন কনটেইনার রাখার জায়গা নেই বললেই চলে। কনটেইনার বহনকারী যন্ত্রপাতিগুলোর মুভমেন্টই কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ১৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙ্গরে ১১৩টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজই ছিল ২৯টি। এর মধ্যে আবার ১০টি জাহাজ জেটিতে নোঙ্গররত থাকলেও ১৯ কনটেইনার জাহাজ জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় বহির্নোঙ্গরে অলস বসেছিল। সূত্র মতে, বন্দরে আসা ১০২টি কর্মক্ষম জাহাজের মধ্যে ৫০টি জাহাজে কাজ হলেও ৫২টি জাহাজ অলস বসেছিল।
সূত্র মতে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রেক বাল্ক এলাকায় সাধারণ পণ্যের স্তূপও দিন দিন বাড়ছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড নজিরবিহীন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিতে সাধারণত যে জট লেগে যায় তা স্বাভাবিক হতে অন্তত ১৫-২০ দিন লেগে যায়। ●
অকা/বাণিজ্য/ফর/রাত/১৬ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে