অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ২৯.৩৩ শতাংশের অবিশ্বাস্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য যেকোনো রফতানিকারক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এই চার মাসে বাংলাদেশ ২৯৮ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী অবস্থানের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (OTEXA)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এই উজ্জ্বল চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্ব অর্থনীতির বৃহত্তম বাজারে এমন শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৬২১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৫ শতাংশ বেশি। এই বৈশ্বিক আমদানির পেছনে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান রফতানি সক্ষমতা একটি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
যদিও প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অর্জন করেছে, রফতানি আয়ের নিরিখে এখনও ভিয়েতনাম শীর্ষে রয়েছে। একই সময়ে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে ৫০৮ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬.০৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, এক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পোশাক সরবরাহকারী দেশ চীন থেকে আমদানি মাত্র ০.৬৬ শতাংশ বেড়ে ৪৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের অংশীদারিত্ব ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশের পরই প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই সময়ে ভারত থেকে মার্কিন বাজারে রফতানি বেড়েছে ২০.৩০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া থেকে রফতানি ১৫.৬০ শতাংশ বেড়ে ১৬০ কোটি ১১ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.৭৯ শতাংশ, যার মোট রফতানির পরিমাণ ১২৩ কোটি ৯ লাখ ডলার। কম্বোডিয়ার আয় বেড়েছে ১৯.৫৭ শতাংশ, যা ৭৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের সমতুল্য।
বাংলাদেশের এই শক্তিশালী অগ্রগতির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে: উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতামূলক দাম, বৈচিত্র্যময় পণ্যের সরবরাহ এবং পরিবেশবান্ধব কারখানার বিস্তার। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বহু ব্র্যান্ড এবং রিটেইলার চীনের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার উৎসের দিকে ঝুঁকছে, যার প্রত্যক্ষ সুবিধা বাংলাদেশ পাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ রফতানি আয়ের দিক থেকেও ভিয়েতনামকে অতিক্রম করতে সক্ষম হতে পারে। তবে এর জন্য টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার প্রসার, প্রযুক্তির ব্যবহার, জ্বালানি ও কাঁচামাল সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা অপরিহার্য।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের এমন উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য। এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকার, শিল্প উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বিত ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ প্রয়োজন। ●
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/১৬ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 weeks আগে