তারেক আবেদীন ●
চতুর্থ প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি হিসেবে ব্যবসায়ে শীর্ষে থাকা সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড হঠাৎ আলোচনায়। দেশের বীমা অঙ্গনে কোম্পানিটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মীর রাশেদ বিন আমান কয়েকদিন ধরে অফিসে অনুপস্থিত। গত রাতে তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান বরাবর ছুটি চেয়ে আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, কোম্পানিটির সিংহভাগ মালিকানা বর্তমান চেয়ারম্যান সফল পোশাক ব্যবসায়ি ও শিল্পপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারবর্গের। চেয়ারম্যানের পারিবারিক অভ্যন্তরীণ সমস্যার রেশ পড়েছে গোটা কোম্পানির ইমেজের ওপর। সমস্যা এখন পরিবারের দুই পক্ষের মধ্যে। কয়েকদিন ধরে কোম্পানির ভেতর ও বাহিরে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় লাগাতার সভা চলছে।
গতকাল (২ জানুয়ারি) মালিক পক্ষের এক সভায় সোনালী লাইফের আপাতত এমডি হিসেবে কোম্পানির সহকারী এজেন্সী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দাফতরিক চিঠির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থকাগজকে তা জানিয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম। আজ থেকে তিনি নতুন দায়িত্বে কাজ শুরু করেছেন। সভার কাজে ব্যস্ত বলে তিনি জানান।
২০১৩ সালে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড দেশে জীবন বীমা কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, ১০ বছরে কোম্পানির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি বেশ আশাব্যঞ্জক । সাড়ে ৮ বছরের মধ্যে দেশের পুঁজি বাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন ছাড়াও কোম্পানিটি এ সময়ের মধ্যে ৫৭২ কোটি জীবন তহবিল গঠন রীতিমত ঈর্ষণীয় বিষয়। সোনালী লাইফের বীমা দাবী পরিশোধ নিয়মিত এবং পরিশোধের হার শতভাগ।
বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণকারি প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) মিডিয়ায় অতি সম্প্রতি সোনালী লাইফের আর্থিক বিষয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হওয়ায় উত্থাপিত অনিয়মের ব্যাপারে তদন্তের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ প্রদান করেছে। ৩১ ডিসেম্বর আইডিআরএ‘র পরিচালক (আইন) মোহাঃ আব্দুল মজিদ সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো চিঠিতে (স্মারক -৫৩.০৩.০০০০.০৭১.২৭.০২৯.২৩.১৩১) ১৭টি কার্যপরিধিতে তদন্ত কাজে নিরীক্ষক হুদা ভাসী চৌধুরী এন্ড কোম্পানিকে সহযোগিতার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে আইডিআরএ‘র কাছে নিরীক্ষক প্রতিবেদন দেবার কথা রয়েছে।
আইডিআরএ‘র বিশ্বস্ত একটি সূত্র অর্থকাগজকে জানায়, তথ্য প্রযুক্তির সর্বাধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালিত কোম্পানিটিতে হঠাৎ দুই পক্ষের পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ দ্বন্দ্ব দীর্ঘায়িত হলে আগামীতে দেশের গোটা বীমা খাতে মন্দ প্রভাব পড়তে পারে।
সোনালী লাইফের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কয়েকজন শাখা ব্যবস্থাপকের মতে, ব্যবসায়ের বর্তমান গতিধারা ধরে রাখতে আপতত রাশেদ স্যারের বিকল্প নেই। তিনি দক্ষ টিম লিডার। অক্লান্ত পরিশ্রমী এই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বীমা প্রিমিয়াম ব্যবসা অর্জনে বেশ চৌকষ ও কৌশলী। কিন্তু অতি সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ে কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত, কোম্পানি থেকে বের হয়ে যাওয়া কর্মকর্তাদের যোগসাজশ, জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু আপত্তিকর ছবি ভাইরাল হওয়া ইত্যাদি বিষয় কোম্পানির সুনাম এবং ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে। এসব আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে সোনালী জীবন সুখের জীবন আগামী দিনে বলা যাবে না সোনালী লাইফের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে নিরীক্ষাসংক্রান্ত ১৭টি বিষয়ে জানার জন্য সেলফোনে যোগাযোগ করা হয় অর্থকাগজ এর পক্ষ থেকে। তার স্বয়ংক্রিয় ভয়েজ ম্যাসেজ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে প্রশ্ন করা হয়।
সদ্য সমাপ্ত বছরে (২০২৩) সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর প্রথম বর্ষের প্রিমিয়াম ব্যবসা ৮৩৩ কোটি টাকার ওপরে । এ উপাত্ত দিয়ে কোম্পানিটির শাখা ব্যবস্থাপক হাক্কানী খন্দকার অর্থকাগজকে আরও জানান, মালিকপক্ষের ব্যক্তিগত সমস্যা সাময়িক; আশা করছি শিগগির তা সমাধান হয়ে যাবে। কোম্পানির প্রবৃদ্ধিতে কোন প্রভাব পড়েনি এখনও। আমাদের লাইফ ফান্ড ৯৫০ কোটি টাকার ওপরে। সোনালী লাইফের গর্বিত একজন সদস্য হিসেবে আমি মনে করি কোম্পানির অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। ●
অকা/জীবীকো/বিপ্র/ রাত, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে