অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে জটিলতা ও আর্থিক নীতি-সংকটের কারণে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছে এ শিল্প। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় চার শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সংগঠনটির দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট নীতি সহায়তা প্রদান করা হলে এসব কারখানা পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে এবং এতে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গত রোববার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ব্যাংকিং জটিলতা নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। সভায় সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক ফয়সাল সামাদসহ প্রায় সত্তরটি সদস্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খেলাপি ঋণ নীতিমালা, ফোর্সড লোন, মামলার জটিলতা, এক্সিট পলিসি এবং বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানার জন্য নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় সদস্যরা কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। খেলাপি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে দশ বছর করার দাবি জানানো হয়। ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ কমানো, সহনশীল এক্সিট নীতিমালা প্রণয়ন এবং ফোর্সড লোন ও মামলার কারণে কারখানার কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া বন্ধ করার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পায়। পাশাপাশি, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়।
সভায় আরও উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে রুগ্ণ হয়ে থাকা সাতাত্তরটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। নইলে এগুলো বন্ধ হয়ে গেলে রফতানি আয় এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান আরও সংকটাপন্ন হবে।
সভা শেষে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, সদস্যদের উত্থাপিত সব প্রস্তাব দ্রুতই পরিচালনা পর্ষদ পর্যালোচনা করবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোকে তাদের সমস্যাগুলো লিখিত আকারে দ্রুত বিজিএমইএকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং উৎপাদন ব্যয়ের চাপের কারণে আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এর সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের নীতিগত জটিলতা যুক্ত হওয়ায় শিল্পের টেকসই উন্নয়ন কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতি সমাধানে সরকার ও আর্থিক খাতের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি, নইলে দেশের রফতানি আয় ও লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান বড় হুমকির মুখে পড়বে। ●
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 5 days আগে