তারেক আবেদীন ●
আয়-ব্যয়ে সমন্বয় না থাকায় ঢাকা ছাড়ছে হাজারো মধ্যবিত্ত। চোখ ধাঁধানো ফ্লাইওভার- মেট্রোরেলেও মানুষের তুষ্টি নেই যেন! নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের ক্রমবর্ধমান দামের মহানগরে বসবাসরত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগণের যাপিত জীবন চলছিলো অনেক কষ্টেই। কিন্তু অতিমারি করোনায় দীর্ঘসময় প্রায় উপার্জনহীন জীবন তাদের লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। বেশ সংকটের মুখে পতিত হয়েছে তাদের জীবন।
মধ্যবিত্তদের বড় অংশ ক্রমান্বয়ে নিম্নবিত্ত কাতারে যাচ্ছ। আরামবাগ, মালবিাগ মোড়, শান্তিনগর, আজিমপুর মোড়, সিদ্ধেশ্বেরী মোড়, রামপুরা, কমলাপুরসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে ঝুলছে অসংখ্য ভাড়া বাসার বিজ্ঞপ্তি। যা আগে চোখে এমনটি চোখে পড়েনি! একটি দেয়ালে ২শ’ থেকে ৩ শ’ ‘টু লেট’ দেখা যাচ্ছে। ঢাকার এত বাড়ি বা ফ্ল্যাট প্রায় ফাঁকা! রহস্য কী?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সত্যিই রাজধানীর বাসা-বাড়ি এবং ফ্ল্যাটগুলো ফাঁকা। নতুন ভাড়াটিয়ার প্রত্যাশায় ‘টু-লেট’ ঝোলানো হয়েছে।
করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে এবং ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত বছর যারা গ্রামে ফিরে গেছেন; তাদের অর্ধেক মানুষ ঢাকায় ফিরে আসেননি বলে জানা গেছে। আবার যারা এসেছেন তারা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে না পেরে কেউ কেউ ফের ফিরে গেছেন; কিংবা কেউ আগের চেয়ে নিম্নমানের বাসায় কম টাকার ভাড়ায় উঠেছেন। এছাড়াও লেখাপড়া শেষ করে যে লাখ লাখ চাকরি প্রত্যাশী তরুণ ও প্রৌঢ় মাসে মাসে টিউশনি করতেন; তাদের বড় অংশ তা হারিয়ে মেস ছেড়েছেন। তারা গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। ফলে মেস বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত অনেক রুম খালি পড়ে রয়েছে। রাজধানীর চোখ ধাঁধানো ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এবং নতুন নতুন উঁচু দালানকোঠা তাদের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি বরং অর্থনৈতিক সঙ্কটে মধ্যবিত্তদের মধ্যে অনেকেই জীবন যাপনের ধারা পাল্টিয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মধ্যবিত্তদের অবস্থা শোচনীয়। কারো আয় বন্ধ হয়ে গেছে, কারো কমেছে। প্রতিটি পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না তারা। ফলে মানুষ ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন!
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসয়িশেন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাসা ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪শ’ শতাংশ। একই সময়ে নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে ২শ’ শতাংশ। এতে নিত্য পণ্যের দামের তুলনায় বাসা ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। অন্য এক জরীপে জানা গেছে, রাজধানীর ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া মানে আবাসন খাতে। মহানগরের বাসা ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিটি পণ্যের মূল্য এখন লাগামহীন। বিশেষ করে জ্বালানি তেল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় গণ পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি গ্যাসসহ প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সে তুলনায় বেশির ভাগ কর্মজীবীর আয় কমে গেছে।
১৪৬৩.৬০ বর্গমিটার আয়তনের রাজধানী শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন প্রায় দুই কোটি মানুষ। নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন লাখ লাখ মানুষ। ঢাকা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সারাদেশের মানুষ রাজধানীমুখী। ফলে ঢাকায় বাসা ভাড়া বেশ। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বেশি। কর্মজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষকে উচ্চ ভাড়ায়, বলতে গেলে বেতনের বা আয়ের সিংহভাগ টাকা দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। বাসা ভাড়ার খরচ মানুষকে অর্থনৈতিক যন্ত্রণার মুখে ফেলেছে প্রতনিয়িত। তারপরও মানুষ ঢাকায় বসবাসের চেষ্টা করে! বর্তমান সময়ে চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। রাজধানী ঢাকার এখন প্রায় সব এলাকার বাসায় বাসায় ঝুলছে ‘টু-লেট’। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে জানা গেছে, বিগত কিছুদিন ধরে নতুন করে আশানুরূপ ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বাসার বাডড়ি বা ফ্ল্যাট মালিকরা। ফলে অনেক বাসা ফাঁকা পড়ে আছে তাদের। মালিকরা বলছেন, বিল্ডিং নির্মাণ করতে ব্যয় বেড়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে। অথচ ভাড়াটিয়ার অভাবে বিল্ডিংয়ের একাধিক ফ্ল্যাট খালি পড়ে রয়েছে।
#
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 years আগে