অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
অনেক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনকে টপকে শীর্ষস্থান দখল করেছে ভিয়েতনাম। ২০২৪-২৫ বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের চেয়ে ১৮ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রফতানি করেছে ভিয়েতনাম। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকার সমান। এই রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। এই বাজারে শীর্ষ দশ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমনটাই উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি এই পরিসংখ্যান মার্চ পর্যন্ত। এপ্রিলের শুরুতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ। বেইজিং দফায় দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অবশ্য তার আগেই তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনকে পেছনে ফেলেছে ভিয়েতনাম।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে ভিয়েতনাম ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। এই রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে চীন রফতানি করেছে ৩৬০ কোটির ডলারের তৈরি পোশাক। এ েেত্র তাদের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত অর্থ বছর বাংলাদেশের মোট পণ্য রফতানির ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে রফতানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।
এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে ভারত ১৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রফতানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর পঞ্চম শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া রফতানি করেছে ১২৩ কোটি ডলারে পণ্য। তাদের রফতানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে মেক্সিকো ৬৪ কোটি ডলার, হন্ডুরাস ৪৮, কম্বোডিয়া ৯৩, পাকিস্তান ৫৫ ও কোরিয়া ৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কম্বোডিয়ার রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মেক্সিকো ও কোরিয়ার রফতানি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ করে। যদিও হন্ডুরাসের রফতানি কমে গেছে ১০ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছর এই বাজারে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশের রফতানিকারকেরা। তার মানে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছর সেই গড় বেড়ে হয়েছে ৭৪ কোটি ডলার। ●
অকা/শিবা/ফর/বিকাল/৯ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 days আগে