অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সূচকের টানা উন্নতির পর সংশোধনে আরেকটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজি বাজার। গত সপ্তাহের শুরুটা সূচকের উন্নতি দিয়ে হলেও পরবর্তী তিন কর্মদিবসে বাজারে সংশোধনের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পুঁজি বাজার সূচকের বড় ধরনের অবনতি ঘটতে দেখা যায়। তবে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে এসে হারানো সূচকের একটি অংশ ফিরে পায় বাজারগুলো। পুঁজি বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর আগে সূচকের টানা উন্নতিতে বাজারের কোম্পানি ও ফান্ডগুলোর মূল্যস্তরে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা থেকে মুনাফা তুলে নিতে গেলে বাজারে বিক্রয়চাপ তৈরি হয়, যা বাজারের সংশোধন ঘটায়। এ সংশোধনের ফলে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা শেয়ার বাজারে যে লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছিল শেষ কর্মদিবসে এসে তা পৌঁছে যায় অর্ধেকে।
সপ্তাহের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল পুঁজি বাজারের। ওই দিন সূচকের উন্নতির পাশাপাশি চলতি বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন নিষ্পত্তি করে দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু পরবর্তী তিনদিন যথারীতি সংশোধনের শিকার হয় বাজার। পুঁজি বাজারের আচরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সাধারণত সূচক ও লেনদেনের বড় উন্নতি ঘটা মানেই তা বাজারের জন্য সংশোধনের ইঙ্গিত দেয়। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পরবর্তী দুই দিনে বড় ধরনের সূচক হারায় ডিএসই। তবে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে এসে বাজার ফের ঘুরে দাঁড়ায়। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচকটির উন্নতি ঘটে ৫০ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১ দশমিক ৬১ শতাংশ তথা ৯০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৭ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ৬১৪ দশমিক ২৮ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করা সূচকটি ১১ সেপ্টেম্বর দিনশেষে পাঁচ হাজার ৫২৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে স্থির হয়। এ সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৬৮ ও ৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট তথা ১ দশমিক ৪৫ ও ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সূচকের এ অবনতি বাজারটির লেনদেনকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। যেখানে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ডিএসইর লেনদেন ছিল এক হাজার ৪৪১ কোটি টাকা সেখানে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজারটির লেনদেন নেমে আসে ৭৭৮ কোটিতে। অথচ শেষ দিন ডিএসইর সবগুলো সূচকের উন্নতি ঘটতে দেখা যায়। পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ইতিবাচক আচরণে বাজারে যে আস্থার জায়গাটি তার প্রকাশ ঘটে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে। কিন্তু দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা বিনিয়োগকারীরা নেতিবাচক বাজার আচরণে দ্রুতই হাত গুটিয়ে নেন। এতে হ্রাস পায় বাজারের লেনদেন। তারা মনে করেন, ঘুরে দাঁড়ানো বাজারে আবার বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।
গত সপ্তাহে ঢাকা শেয়ার বাজার মোট পাঁচ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১১ দশমিক ৪৫৪ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন ছিল ৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। একই সময় ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। সপ্তাহের শুরুতে বাজারটির মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ১১ সেপ্টেম্বর সপ্তাহান্তে ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় নেমে আসে। এটি আগের সপ্তাহ অপেক্ষা শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কম।
বিদায়ী সপ্তাহে (৭ সেপ্টেম্বর-১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মাঝে শীর্ষে উঠে এসেছে টেলিকমিউনিকেশন খাতের বহুজাতক কোম্পানি রবি আজিয়াটা। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.১৬ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।
লেনদেনের তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৯২ শতাংশ। এ ছাড়া সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিটি ব্যাাংক, ইজেনারেশন, ডমিনেজ স্টিল, লাভেলো আইমক্রিম এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানি ও ফান্ডগুলোর মাঝে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড। সপ্তাহের ব্যবধানে সিএপিএমবিডিবিএল মিচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির দর বেড়েছে ৪০ পয়সা বা ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ দর বৃদ্ধি নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে এস আলম কোল্ড রোল্ড। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩ টাকা ৭০ পয়সা।
এ ছাড়া সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএমআইবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, ফনিক্স ফাইন্যান্স, বিডি ফাইন্যান্স এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মাঝে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে জীবন বীমা কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। সপ্তাহজুড়ে ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ১৮ টাকা ৪০ পয়সা বা ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সপ্তাহের পতনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির দর কমেছে ৩০ পয়সা বা ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পতন নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে ইনটেক অনলাইন। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা।
এ ছাড়া সাপ্তাহিক পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল- প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, বিডিকম অনলাইন এবং চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 hours আগে